নাম তার সুশান্ত শীল। ঝালকাঠি স্টেশন রোডের মিতালী সেলুনে নাপিতের কাজ করেন। বিয়ে করেছেন রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগ পানির ট্যাংকি এলাকায়।
দুই যমজ কন্যার জনক সুশান্ত। ওদের বয়স ১৩ মাস। একজনের নাম টাপুর আরেকজনের টুপুর।
স্ত্রী ও কন্যাদের নিয়ে ঝালকাঠির কিস্তাকাঠি আবাসনে ২৪ নম্বর ব্যারাকের ৬ নম্বর ঘরে বসবাস সুশান্তের।
শুক্রবার শাটডাউন হবে শুনে বৃহস্পতিবার স্ত্রী সুমা রানী শীল ও দুই কন্যাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে যান সুশান্ত। কিন্তু লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠায় নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে বিকেল সাড়ে ৫টায় পুলিশের নির্দেশে লঞ্চটি ঘাট ছাড়ে।
লঞ্চে উঠতে না পেরে সুশান্ত স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে তড়িঘড়ি করে চলে যান বরিশাল লঞ্চঘাটে। সেখানে ঘটে নিদারুণ এক ঘটনা।
কন্যা টাপুর ছিল সুশান্তর কোলে আর টুপুর ছিল সুমা রানীর কোলে। লঞ্চঘাটে যাত্রীদের ভিড়ে স্বামী-স্ত্রী আলাদা দুটি লঞ্চে উঠে পড়েন।
সুশান্ত তার স্ত্রী সুমাকে খুঁজে না পেয়ে লঞ্চ থেকে বের হয়ে টার্মিনালে চলে আসেন। ওই সময় ঘাট থেকে কয়েকটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
ছেড়ে যাওয়া একটি লঞ্চে ছিলেন সুশান্তর স্ত্রী সুমা। স্বামীকে খুঁজে না পেয়ে সুমা লঞ্চের এক যাত্রীর মোবাইল ফোন থেকে কল করে সুশান্তকে জানান, তিনি সুন্দরবন লঞ্চে আছেন। তখন আর ঢাকায় যাওয়ার উপায় নেই সুশান্তের। কন্যাকে নিয়ে বরিশাল থেকে ঝালকাঠি ফিরে আসেন তিনি।
ঘড়ির কাঁটা যখন রাত সাড়ে ১০টার ঘরে তখন ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস মোড়ে এসে পৌঁছান সুশান্ত। এতক্ষণ মাকে কাছে না পেয়ে কাঁদতে শুরু করে টাপুর। তার কান্না থামাতে প্যাকেট দুধ খুঁজতে থাকেন সুশান্ত। ঠিক তখনই সুশান্তর সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার এই প্রতিবেদকের।
সুশান্ত বলেন, ‘এই বাচ্চা সকালে ঘুম থেকে উঠেই মা মা করে ডাকবে। এদিকে শাটডাউন শুরু। আমি তো ঢাকাতেও যেতে পারব না।’
একপর্যায়ে কন্যাকে নিয়ে আবাসনের বাড়ির উদ্দেশে হাঁটতে শুরু করেন সুশান্ত।