কুষ্টিয়ার হরিপুরের মোলায়েম ব্যাপারী। গরু কেনাবেচার পাশাপাশি করেন কসাইয়ের কাজও।
এবার ঈদে বেচবেন বলে ঢাকায় গরু নিয়ে যান ১৩টি। লোকসান দিয়ে ৯টি বিক্রি করেছেন। কিন্তু চারটি বড় গরু বেচতেই পারেননি।
এগুলো বাড়িতে ফিরিয়ে এনে দুই ধরনের বিপত্তিতে তিনি। প্রথমত, তার বাড়িতে চারটি গরু রাখার জায়গা নেই। তাই রেখেছেন কুষ্টিয়া শহরে আত্মীয় বাড়ি। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি গরুর খাবারের পেছনে প্রতিদিন যে অর্থ খরচ হচ্ছে, তাতে তার সঞ্চয়ে পড়েছে টান।
কোরবানির গরুর ব্যবসায় কখনও পাওয়া যায় বড় অঙ্কের মুনাফা, কখনও বড় লোকসান। করোনার দ্বিতীয় বছরে এবার খামারি আর ব্যাপারীদের মাথায় হাত।
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা বা বড় শহরে নিয়ে এসে বেশিরভাগ গরুই বেচা যায়নি। ট্রাক ভাড়া দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এখন যে বিপাকে পড়েছেন তারা, তা ভাবনাতেও ছিল না।
কোরবানির পরে বাজারে গরুর চাহিদা কমে যায়। ফলে এখন চাইলেই বিক্রি করা যাবে না। তাদের ধারণা, অন্তত দুই থেকে তিন মাস সময় প্রাণীগুলোকে পালতে হবে।
এ ক্ষেত্রেও ঝামেলা আছে। বেশিরভাগ ব্যাপারীর ঘরে জায়গা নেই। মোলায়েম ব্যাপারীর মতোই স্বজনদের কাছে রেখেছেন, কেউ কেউ ভাড়ার বিনিময়ে রেখেছেন অন্য জায়গায়।
কেউ বেধে রেখেছন নিজের বাড়ির বারান্দায়। এখানেও আছে চুরির ভয়। তাই রাত জেগে থাকতে হয় পাহারায়।
আবার প্রাণীগুলো, একটি পরিবেশে অভ্যস্ত ছিল। নতুন পরিবেশে লালনপালনে ঝক্কি বেশি। ঢাকায় আনা নেয়ার ঝক্কিতে ওজন হারিয়েছে বহু গরু। তাদের স্বাস্থ্য ধরে রাখাও একটি বড় সমস্যা।
মোলায়েম ব্যাপারী বলেন, ‘আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে কসাইদের কাছেও গরুর দাম কম থাকবে। কারণ মানুষের কাছে কোরবানির মাংস থেকে যাবে। এ সময়ে গরু বিক্রি করা কঠিন হবে। এ সব গরুর খাবার জোটাতে গিয়ে সব টাকা শেষ হয়ে যাবে ‘
ঢাকা থেকে ফেরত নেয়া গরুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে ব্যাপারীরসদরের কবুরহাট মালিথাপাড়ার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘১১টি গরু কিনে ঢাকায় নিয়েছিলাম। ৭টি ফেরত আনতে হয়েছে। এগুলোর রাখার জায়গা নেই। বাড়ির বারন্দায় গাছের সঙ্গে বেধে পাহারা দিচ্ছি। হাট খুললেই বেচে দেয়ার চেষ্টা করব।’আরও পড়ুন: বেচা হলো না গরু, কষ্ট বৃথা, ট্রাক ভাড়াটা লোকসান
শহরের ৬ রাস্তার মোড় এলাকার হাজী জিল্লুর রহমান তিনটি গরুই ফেরত এনেছেন। তিনি বলেন, ‘গরুর যে দাম বলেন ক্রেতারা তাতে মাংসের হিসেবে মণপ্রতি ১২ হাজার টাকা পড়ে। কিছুদিন আবার খাইয়ে সুবিধাজনক সময়ে বেচলে দাম মণপ্রতি ২০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। তাতে কিছুটা লোকসান কম হবে।’
ফিরিয়ে আনা গরুর প্রতি রাগ না করে তাকে আবার হৃষ্টপুষ্ট করার পরামর্শ দেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসেবে কুষ্টিয়া জেলায় মোট আড়াই লাখ গরু মোটাতাজা করা হয়। এরমধ্যে ঢাকায় নেয়া হয়েছিল ১ লাখের মতো। তার অর্ধেকেই ফেরত এসেছে।
পাটুরিয়া ঘাটের কাছে জট লাগায় ঈদের দিন আসতে পারেনি সব ট্রাক।
গরু পালনকারী ও ব্যবসায়ীরা বলেন, তিন ভাগের একভাগ গরুও বেচতে পারেননি তারা। ক্রেতারা দাম কম বলায় পরিবহন খরচের লোকসান মাথায় করেও গরু ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন তারা। সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় ট্রাকের ওপরই ভিজতে হয়েছে।
জেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এবার করোনা মহামারির কারণেই কি না, কোরবানি কম দিয়েছে মানুষ। আগের মতো কোরবানির গরু বেশি দামে কেনার মতো আবেগ এবার মানুষের নেই। সবাই জীবন বাচাতেই ব্যস্ত।’