বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকায় ফিরতে সড়কে মানুষের ঢল

  •    
  • ২২ জুলাই, ২০২১ ১৯:৩৬

শুক্রবার থেকে ১৪ দিনের কঠোর শাটডাউন। তাই ঈদের আমেজ কাটতে না-কাটতে রাজধানীর দিকে ছুটছে মানুষ। বাড়তি চাপের কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে এসে ধীরগতিতে ঘুরছে গাড়ির চাকা। তবে যানজটের খবর পাওয়া যায়নি।

রাত পোহালেই ‘সবচেয়ে কঠোর’ শাটডাউন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ থাকবে গণপরিবহন। চলবে না ফেরি-লঞ্চও। এ কারণে ঈদের আমেজ কাটতে না-কাটতে রাজধানীতে ফিরছে মানুষ।

সংসারের চাকা সচল রাখতে ও চাকরি বাঁচাতে তারা ছুটছেন। অথচ ঈদের আগের দিন ভোগান্তি মাথায় করে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলেন কর্মজীবীরা।

হঠাৎ সড়কে চাপ বাড়ায় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে এসে কমে যাচ্ছে গাড়ির চাকার গতি। তবে যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। পরিবহন কম থাকায় গাড়িতে নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই। সবাই যেন ছুটছেন হন্যে হয়ে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

গাজীপুরের একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন শাহ নেওয়াজ। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ৬ নম্বর বোকাইনগর ইউনিয়নে পরিবার নিয়ে উদযাপন করেছেন ঈদ।

ছুটি শেষ হতে না হতেই কাজে যোগ দিতে রওনা হয়েছেন গাজীপুরের উদ্দেশে।

বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে ময়মনসিংহের পাটগুদাম বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, তিনি একটি ঢাকাগামী বাসে বসে আছেন।

কথা হয় শাহ নেওয়াজের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিবছর দুটি ঈদে পাঁচ থেকে ছয় দিন ছুটি পান। সরকারি সিদ্ধান্তে শুক্রবার থেকে আবারও সারা দেশে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হচ্ছে। তাই ছুটিও পেয়েছেন তিন দিন।

‘ঈদের আগের দিন এসেছিলাম। ইচ্ছে করলে অনুমতি নিয়ে আরও দুই দিন ছুটি বেশি কাটাতে পারতাম। তবে আগামীকাল থেকে যদি গাড়ি না পাই, পরে আর যেতে পারব না। তাই রওনা হয়েছি।’ যোগ করে শাহ নেওয়াজ।

পাশের সিটের থাকা আজগর আলী বলেন, ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে একটি বাসার কেয়ারটেকার তিনি। সাত দিনের ছুটি পেয়েছিলেন। কিন্তু কাল থেকে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে, ঢাকায় যেতে পারবেন না। এ জন্য আজই রওনা দিয়েছেন।

‘আগে ময়মনসিংহ থেকে মহাখালী পর্যন্ত বাস ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা লাগত। আইজক্যা অসংখ্য যাত্রী থাকায় ভাড়া নিতাছে ৩৫০ টাকা। সবগুলো সিটেই দুইজন বইয়্যা রইছে। তবু সিট পাওন যাইতাছে না।’

শহরের মাসকান্দা আন্তজেলা বাস টার্মিনালে দেখা গেছে, যাত্রীতে কানায় কানায় ঠাসা টার্মিনাল। প্রতিটি বাসে পাশাপাশি দুটি সিটেই বসানো হচ্ছে যাত্রী।

দুই সিটে একজন করে যাত্রী নেয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ছবি: নিউজবাংলা

আসাদুল নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আধা ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কেটে সিট পেয়েছি। সরকারি নির্দেশে দুই সিটে একজন করে নেয়ার কথা থাকলেও দুই সিটেই যাত্রীকে বসতে দেয়া হচ্ছে। নেই হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা।’

এনা বাসের চালক আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী নিচ্ছি। কাউন্টারের সামনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও হাত ধুতে যাত্রীদের অনীহা রয়েছে। এ ছাড়া গাড়ি ছাড়ার আগে প্রতিটি সিটে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়েছে।’

দুই সিটে দুজনকে বসিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যেসব যাত্রী পরিবার নিয়ে এসেছে, তাদের একসঙ্গে বসতে দেয়া হচ্ছে। আর যারা একা এসেছে তাদের দুই সিটে একজনকেই বসতে দেয়া হয়েছে।

গত ১ জুলাই থেকে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। কিন্তু এরপরও বেড়েই চলেছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু।

তারপরও ঈদ সামনে রেখে সাত দিনের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। সেই সময়েই ঘোষণা আসে ২৩ জুলাই থেকে ফের আরোপ হবে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে দূরপাল্লার বাসসহ নানা ধরনের যানবাহনের চাপ বেড়েছে।

মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল, মদনপুর ও মোগরাপাড়া এলাকায় দূরপাল্লার গাড়ি থেকে নামছেন অনেকেই। তবে বেশির ভাগ মানুষের যাত্রা ঢাকার দিকে।

গাড়ির চাপ থাকলেও মহাসড়কে যানজট দেখা যায়নি। তবে অতিরিক্ত গাড়ির কারণে চাকা ঘুরছে ধীর গতিতে।

যাত্রী হারুন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আজ (বৃহস্পতিবার) চলে আসলাম। কারণ আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে ঢাকার দিকে গাড়ি চলবে না। কষ্ট হলেও চলে আসতে হলো।’

নোয়াখালী থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন ইসতিয়াক আহমেদ নামের এক যাত্রী।

তিনি বলেন, ‘অফিসের কাজে কোথায় যেতে হয় তার ঠিক নেই। তাই গ্রাম থেকে ঢাকার ভাড়া বাড়ির দিকে যাচ্ছি।’

যেসব চালক গাড়ি নিয়ে ঈদের আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দিকে গেছেন তারাও ঢাকায় ফিরছেন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে বেড়েছে গাড়ির চাপ, তবে নেই যানজট

লক্ষ্মীপুর থেকে আসা মাইক্রোবাস চালক পঞ্চু মিয়া বলেন, ‘ঈদের আগের রাতে যাত্রী নিয়ে লক্ষ্মীপুর গেছিলাম। কাল থেকে শাটডাউন, তাই আজই চলে আসলাম। কারণ গাড়ির মালিকের কাছে তার গাড়ি বুঝায় দিতে হবে।’

চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী নিয়ে আসা চালক ফারুক হোসেন বলেন, ‘ঢাকার দিকে যাওয়ার মানুষের চাপ অনেক। আসার সময় মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে দেখলাম অনেক মানুষ ঢাকার দিকে যাইতে গাড়িতে উঠতাছে। আমার গাড়ির স্ট্যান্ডও ঢাকায়। তাই যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছি।’

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক

একই চিত্র ঢাক-সিলেট মহাসড়কেও।

এ সড়কের বরাব, রূপসী এলাকায় স্বাভাবিক গতিতেই ঢাকার দিকে যাচ্ছে যানবাহন।

সিলেটের সুনামগঞ্জ থেকে প্রাইভেট কারে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন সুতা ব্যবসায়ী কবির হোসেন।

তিনি বলেন, ‘১৪ দিনের লকডাউন, তাই নানা বাড়ি থেকে ঢাকায় চলে যাচ্ছি। কারণ কাল থেকে তো সব বন্ধ।’

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কাল থেকে আবার লকডাউন। তাই যারা ঈদে বাড়িতে গেছেন তাদের মধ্যে অনেকই রাজধানীর দিকে ছুটে আসছেন। এ কারণেই আজ মহসড়কে অনেক যাবাহন চলাচল করছে। দুই মহাসড়কেই বেড়েছে গাড়ির চাপ। তবে কোনো যানযট নেই, এটাই স্বস্তি।’

তবে এদিনও রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে অনেকে। ঈদের আগে নানা কারণে বাড়িতে ফিরতে না পেরে ও কঠোর লকডাউনের খবরে গ্রামে ফিরছেন অনেকে।

কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ী রাসেল আহম্মদে বলেন, ‘স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি এসেছিলাম। কাল থেকে আরও কঠোর লকডাউন শুনে বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়েছি। সাইনবোর্ডে থেকে গাড়িতে উঠব।’

সানারপাড় থেকে চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে ব্যবসায় মন্দা। এর ওপর শাটডাউনে ব্যবসার একেবারেই চলে না। শহরে থাকলে অনেক খরচ। তাই সবাইকে নিয়ে গ্রামে যাচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর