কঠোর লকডাউনের কারণে সারা দেশে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও ঈদ উপলক্ষে সেই বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার। যেখানে মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে পরিবহন চালু করা হয়েছে সেখানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাসেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। বিশেষ করে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রীর চাপ থাকার সুযোগে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে এই বাসগুলোর স্টাফরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিআরটিসির কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই অতিরিক্ত ভাড়ায় আদায় করা হচ্ছে। অর্থাৎ অতিরিক্ত যে ভাড়া উঠছে, তার একটি অংশ পকেটে ভরছেন ডিপো ম্যানেজার।
সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বিআরটিসির বরিশাল ডিপোতে ঘুরে পাওয়া গেছে জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ।
কাঁঠালবাড়ি থেকে ননএসি বাসে বরিশালে আসা জিয়াউল করিম বলেন, ‘কাউন্টারের সামনে ৩০৭ টাকা ভাড়া লেখা ছিল, ৬০ ভাগ বর্ধিত ভাড়াসহ। কিন্তু কাউন্টার থেকে আমাকে বরিশালের টিকিট নিতে হয়েছে ৪২০ টাকা দিয়ে। তারা যে টিকিট দিয়েছে তাতে আবার বিআরটিসি’র কোনো সিল নেই। শুধু লেখা পরিবহন সার্ভিস। ভাড়া বেশি নেয়ার কারণ জানতে চাইলে দুর্ব্যবহারও করেছে তারা। তবে সঙ্গে স্ত্রী-সন্তান থাকায় কথা বেশি বলিনি।’
শনিবার রিয়াজুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘কাঁঠালবাড়ি থেকে আমাদের ননএসি একটি বাসে উঠানো হয়, তবে টিকিট আগে কাটতে হয়নি সেদিন। বাসে উঠিয়ে মাঝপথে ভাড়া উঠানো শুরু করে সুপারভাইজার। ৪০০ টাকা ভাড়া চাইলে আমার সাথে এবং আরও কয়েকজন যাত্রীর সাথে বাগবিতণ্ডা হয় বাসের স্টাফদের। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ভাড়া ৩০০ থেকে ৩২০ টাকার মধ্যে।
‘একপর্যায়ে বিআরটিসি বাসের স্টাফরা আমাদের মারতে উদ্যত হয় এবং বরিশালে পৌঁছালে আমাদের মারধরের হুমকিও দেয়।’
জুয়েল নামে এক যাত্রী বলেন, ‘কাঁঠালবাড়ি টু বরিশাল রুটে বিআরটিসির যে বাসগুলো রয়েছে সেগুলো প্রভাবশালীরা কন্ট্রোল করে থাকে। কাঁঠালবাড়ি থেকে বরিশালে অতিরিক্ত ৭৫ টাকা দিয়ে এসেছি, কিন্তু বরিশাল থেকে যাওয়ার সময়ও তারা নেবে। কিন্তু কাউন্টারে বসে নয়। পথে যেতে যেতে লোক তুলবে আর ভাড়া নিবে। এত দীর্ঘ সময় ধরে সরকারি এই বাসের লোকজন এমনটা করতে পারে না। এর সাথে কর্মকর্তারাও জড়িত। শুধু ননএসি বাসেই নয় এসি বাসে ভাড়া রাখছে আরও বাড়িয়ে।
‘জেনেছি করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালানোর জন্য এই রুটে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ননএসিতে ৩০৭ টাকা এবং এসি বাসে ৫৮৬ টাকা। কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে অতিরিক্ত ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত, আর এই টাকাটা নেয়া হয় জিম্মি করে। যেখানে প্রতি দুই সিটে একজন করে বসবে সেখানে করোনাকালে দুই সিটে দুইজন করে এসেছি সরকারের এই পরিবহন সেবায়।’
অভিযোগ, বিআরটিসি বরিশাল ডিপো ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামানকে ম্যানেজ করেই কাঁঠালবাড়ি টু বরিশাল রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে সুপারভাইজাররা। অতিরিক্ত যে ভাড়া নেয়া হয় তার ভাগ ডিপো ম্যানেজারের পকেটেও সময়মত চলে যায় বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিসির দুজন বাসচালক। এ ছাড়া এই বাসের স্টাফদের টাকা দেয়ার টার্গেটও দিয়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন তারা।
এসব বিষয়ে বিআরটিসি বরিশাল ডিপো ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো বাসের স্টাফ অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে সেটা আমরা খতিয়ে দেখব এবং এখানে কেউ কোনো অনিয়ম করে থাকলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া অন্য অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।’