নদী ভাঙনে বসতবাড়ি ও সহায়-সম্বল হারিয়েছেন অনেকে। করোনা পরিস্থিতিতে মিলছে না কাজ। লকডাউনে বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও।
এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আনন্দ নেই কুড়িগ্রামের ১৬টি নদ-নদীর পাঁচ শতাধিক চরাঞ্চলে। ঈদে কোরবানির পশু ও নতুন জামা-কাপড় দূরে থাক এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেককে।
টানা লকডাউন আর নদ-নদীর ভাঙনে সহায়-সম্বল হারিয়ে এসব চরাঞ্চলের মানুষ এখন অসহায়। তাদের ঈদ আনন্দ ফেরাতে সরকারি সহায়তার বিতরণের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ঈদ নিয়ে উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গড়াই পিয়ার গ্রামের রাবেয়া বেগম বলেন, ‘ঈদ নাই হামার, আনন্দ নাই হামার। বেটার ঘরে, হাতত টাকা-পয়সা নাই।
‘তিস্তা নদীর ভাঙনে বাড়িটারি সোগ বিলীন হয়া গেছে। এলা এই গড়াই পিয়ার মাদ্রাসা ঘরে আশ্রয় নিয়া আছি। এটাও ভাঙি গেলে থাকার কোনটে জায়গা নাই।’
একই এলাকার ছামিরন বেগম বলেন, ‘বাপুরে হামার থাকার কোনটে স্থান নাই। এই মাদ্রাসা মাঠত স্থান নিছি। এহন মাদ্রাসা ভাঙলে কডে যামো হামার কোনো বুদ্ধি নাই। ঈদ তো হামরা করবারে পাবান নই।
‘হামার বেটা নাই তিনটা বেটি, সেগুলো বিয়া দিছি। নদী ভাঙছে, হাতত ট্যাহা-কড়ি কিছুই নাই। ঈদ করবার পাবারও নই।’
আব্দুস সালাম বলেন, ‘এই যে লকডাউনে কাজকর্ম করতে পারি নাই। হাতে টাকা-পয়সাও নাই। কীভাবে ঈদ করব, কী করব না করব এর কোনো বুদ্ধি নাই।’
মজিবর রহমান বলেন, ‘হ্যাঁ, বাহে কীসের ঈদ, কীসের কী? হামার থাকার জায়গা নাই, তারে চিন্তায় বাঁচি না। আর ঈদের চিন্তা কী করি। লকডাউন আর নদী ভাঙন এই দুটোই হামাক শ্যাষ করি দিছে।’
জয়নাল মিয়া বলেন, ‘করোনার কারণে বেকার দিন কাটছে। নদী এলাকার মানুষ ভাঙনের চিন্তায় আছি। হাতে টাকা-পয়সা নেই। এর ওপর দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি, ঈদ কীভাবে করব তা আল্লাহ জানেন?’
উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, করোনার কারণে এবার নিম্ন আয়ের মানুষদের কষ্টটা অনেক বেশি। ভিজিএফ, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন সহায়তা আসলেও তা সবাই পায় না।
আবার অনেকেই আছে যারা দিন এনে দিন খান। কাজ না থাকায় তারাও এবার কষ্টে আছেন। সরকারি যে বরাদ্দ আসে তাও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ কারণে এবারের ঈদ আনন্দ তেমন নেই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকারি খাদ্য ও করোনাকালিন সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। লকডাউনের সময় ৩৩৩ নম্বরে কল পেয়ে অনেককেই সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তবে সরকারি সহায়তা অনেকটাই অপ্রতুল। এ কারণে ঈদুল আজহার আনন্দ ভাগাভাগি করতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।