দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে পশু কোরবানি করছেন সাবেক মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বিশ্বাস।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর থেকেই তিনি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে কোরবানি দেন।
জানা যায়, ঈদের দিন কোরবানি করা এ পশুর মাংস পাঁচ শতাংশ রেখে বাকি ৯৫ শতাংশ এলাকার অসহায় মানুষদের মাঝে বিতরণ করেন তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল লতিফ। বেলকুচি উপজেলার কামারপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা এ নেতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
লতিফ বিশ্বাসের স্ত্রী ও বেলকুচি পৌরসভার সাবেক মেয়র বেগম আশানূর বিশ্বাস নিউজবাংলাকে জানান, লতিফ বিশ্বাস ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার খবর শুনে প্রতিবাদমুখর হন। সে সময় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হয়ে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রংপুর জেলে কারাবাস করেন। পরবর্তীতে রংপুর স্পেশাল মার্শাল ল’ কোর্টে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পান। এরপর মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে উৎসর্গ করে এ বছরও কোরবানি দেবেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ
আশানূর বলেন, ‘১৯৭৬ সালে যখন লতিফ বিশ্বাস জেলহাজতে কারারুদ্ধ, তখন আমাকে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করে পশু কোরবানি দিতে বলেছিলেন। আমি তখন হাজার টাকা দিয়ে একটি মাঝারি আকারের ষাঁড় কিনে কোরবানি দিই। এরপর থেকে তিনি নিজেই জাতির পিতার নামে কোরবানির এ প্রথা অব্যাহত রেখেছেন।’
আবদুল লতিফের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির জন্য বড় তিনটি ষাঁড় বেঁধে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ টাকায় কেনা পশুটি অতীতের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের জন্য উৎসর্গ করা।
সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি অনেকটা গোপনই ছিল। প্রতিবছর বাড়তি একটি গরু কোরবানি ও এর মাংস বিতরণের রহস্য জানতে অনেকেই প্রশ্ন শুরু করেন। তখনই সবাইকে জানাই, আসলে জাতির পিতার ডাকে সারা দিয়েই জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। তার ঋণ আমরা জাতি হিসেবে কখনো শোধ করতে পারব না। তাই বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের জন্য এ আমার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ মাত্র।’
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আবদুল খালেক বলেন, ‘লতিফ বিশ্বাস ৪৫ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নামে পশু কোরবানি করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এ জন্যই তিনি আমাদের কাছে এক আদর্শ।’