রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। পরিবারের সঙ্গে গ্রামে ঈদ করতে ঘরমুখী মানুষ। এ কারণে হঠাৎ মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে যাত্রীর ঢল নেমেছে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাটে। সময়ের সঙ্গে বাড়ছে যাত্রীর চাপ। দীর্ঘ হচ্ছে যানবাহনের লাইন।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা গাদাগাদি করে লঞ্চে পাড়ি দিচ্ছেন পদ্মা। যাত্রী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। কেউ মানছেন না সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ।
মঙ্গলবার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের পর হঠাৎ করে যাত্রীর চাপ বেড়ে গেছে। যানবাহনের দীর্ঘ লাইনের কারণে কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সাধারণ মানুষ আসছেন ঘাটে। অনেকে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় দিয়েই ফেরির জন্য অপেক্ষা করছেন।
ঘাটে ফেরি পৌঁছানোমাত্রই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। হুড়োহুড়ি করে ফেরিতে ওঠার চেষ্টা করছেন তারা। একই চিত্র ছিল লঞ্চঘাটেও।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা যায়, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ছোট-বড় ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। এসব ফেরি দিয়ে ধারাবাহিকভাবে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
দুপুরের পরেও পাটুরিয়ায় ফেরি পারের জন্য প্রাইভেট কার ও যাত্রীবাহী বাস মিলে সাত শর বেশি যানবাহন লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন যাত্রী ও যাত্রীবাহী পরিবহনের চাপে সাময়িকভাবে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ রাখা হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ((বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া, আরিচা এবং রাজবাড়ীর কাজিরহাট নৌরুটে ৩৩টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারপার করা হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি লঞ্চেই লাইফ সাপোর্ট রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপ সাধারণ ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দুপুরের পর থেকে হঠাৎ করেই ঘাটে যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ঘাটে ফেরি দেখামাত্রই তারা দৌড়ে ফেরির কাছে যাচ্ছেন। যাত্রীর কারণে গাড়িও ফেরিতে ঠিকমতো উঠতে পারছে না। হঠাৎ যাত্রীর চাপের কারণে ঘাট সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে যানবাহনের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে।’
পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের ম্যানেজার পান্না লাল নন্দী বলেন, ‘সকালে যাত্রীর তেমন চাপ ছিলনা। কিন্তু দুপুরের বৃষ্টির পর থেকে মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। মানুষের চাপের কারণে ঠিকমতো টিকিট দিতে পারি নাই। অনেকে টিকিট ছাড়াই লঞ্চে উঠে পরে টিকিট নিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব মানার কথা বলি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তারা গাদাগাদি করেই লঞ্চে পার হচ্ছেন। তবে আমরা সতর্কতার সাথে লঞ্চ চালাতে বলেছি মাস্টারদের (চালক)।’
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘বিষয়টি আমি আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাচ্ছি। যদি লঞ্চ ও ফেরিতে অতিরিক্ত যাত্রী ও সামাজিক দূরত্ব মানা না হয়, তাহলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, ‘যাত্রীর অতিরিক্ত চাপের কারণে ঘাট এলাকায় যানবাহনের লাইন বড় হচ্ছে। এতে করে বাস ও ছোট গাড়ির যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। তবে যাত্রীর চাপ আর বেশিক্ষণ থাকবে না।’