ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশকে টাকা না দেয়ায় জামিন পাওয়া এক আসামিকে কারাগার থেকে তুলে নিয়ে আরেক মামলায় জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে জেল সুপার ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় অভিযোগ আনা ওই যুবকের মা সাতজনের নাম উল্লেখ করে সোমবার আদালতে মামলার আবেদন করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আয়েশা বেগমের আদালতে মামলার আবেদন করেন ওই মা।
অভিযোগ আনা যুবকের নাম হাফিজ ভূইয়া। ২৫ বছরের হাফিজ সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের দুর্বাজ মিয়ার ছেলে।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন জেল সুপার ইকবাল হোসেন, জেলার দিদারুল আলম, ডেপুটি জেলার রেজাউল করিম, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম, সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) সোহরাব আল হোসাইন, উপপরিদর্শক (এসআই) বাবুল মিয়া ও সুজন কুমার চক্রবর্তী।
হাফিজ ভূইয়ার মা রেজিয়া বেগম জানান, ২৪ জুন হাফিজ ভূইয়াকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মধ্যপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করে সদর মডেল থানা পুলিশ। ১৫ জুলাই হাফিজকে জামিন দেয় আদালত। এ দিন কারাগারে পাঠানো হয় প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র। কিন্তু ১৫ জুলাই রাত পর্যন্ত কারাগার থেকে বের করা হয়নি হাফিজকে।
জামিনের বিষয়টি জানতে পেরে পর দিন ১৬ জুলাই সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) সোহরাব, এসআই বাবুল ও সুজন কারাগারে গিয়ে জেল সুপার ইকবাল, জেলার দিদারুল, ডেপুটি জেলার রেজাউলের সঙ্গে যোগসাজশ করে হাফিজকে নিয়ে যায় সদর থানায়।
বিষয়টি জানতে পেরে তার মা রেজিয়া ও ভগ্নিপতি মন মিয়া থানায় গেলে পরিদর্শক (অপারেশন্স) সোহরাব জানান, হাফিজকে ছাড়তে মোটা অংকের টাকা লাগবে। টাকা না দিলে হাফিজকে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়। পরে ৫ হাজার টাকা দিলে, রাতের মধ্যে হাফিজকে ছেড়ে দিবে বলে আশ্বাস দেয় সোহরাব।
কিন্তু টাকা নেয়ার পর পরিদর্শক (অপারেশন্স) সোহরাব, এসআই বাবুল ও সুজন জানান, তাদের দাবি করা মোটা অংকের টাকা না দিলে হাফিজকে ডাকাতি মামলায় চালান দেয়া হবে। পরবর্তীতে এক মামলায় অজ্ঞাত আসামির জায়গায় হাফিজকে আসামি করে আদালতে চালান দেয়া হয়।
রেজিয়া বেগমের আইনজীবী নিজাম উদ্দিন খান সাংবাদিকদের জানান, এজাহারটি গ্রহণ করে এ বিষয়ে পরে আদেশ দেবে বলে জানিয়েছেন আদালত।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলামকে ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
জেলা কারাগারের সুপার মো. ইকবাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, কারাগারে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিনিয়ত পুলিশ আসে। তবে কারাগারের সীমানা প্রাচীরের ভেতর থেকে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করার নিয়ম নেই। এ ঘটনায় তাকে আসামি করায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, আদালতে এজাহার দেয়ার বিষয়টি শুনেছি। হাফিজকে প্রথমে ডাকাতির প্রস্তুতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সে এলাকায় চিহ্নিত ডাকাত। তার বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলাও রয়েছে। পরবর্তীতে জামিন পাওয়ার পর তাকে অন্য জায়গা থেকে ছিনতাইয়ের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।