বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছাত্রলীগের এক নেতা হত্যা মামলায় আরেক নেতা কারাগারে

  •    
  • ১৯ জুলাই, ২০২১ ২২:০৭

গত ১১ মার্চ রাতে বগুড়া শহরের সাতমাথায় প্রতিপক্ষ গ্রুপের অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাকবীর ইসলাম। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ মার্চ দুপুরে তার মৃত্যু হয়।

বগুড়ায় ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার প্রধান আসামি একই সংগঠনের সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদককে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

প্রায় চার মাস পলাতক থাকার পর আব্দুর রউফ সোমবার ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ হাবিবা মন্ডলের আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মতিন নিউজবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

গত ১১ মার্চ রাতে বগুড়া শহরের সাতমাথায় প্রতিপক্ষ গ্রুপের অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাকবীর ইসলাম। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ মার্চ দুপুরে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় তাকবীরের মা আফরোজা ইসলাম আব্দুর রউফসহ ছয়জনের নামে মামলা করেন। এরপর ১৭ মার্চ রউফকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

২৫ মার্চ রউফ হাইকোর্টে গিয়ে জামিন চাইলে আদালত তাকে ছয় সপ্তাহের জামিন দেয়। নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতের সিদ্ধান্তে জামিনের মেয়াদ পর্যায়ক্রমে বর্ধিত হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মতিন জানান, রউফ সোমবার আবারও আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। তবে আদালত তার আবেদন গ্রহণ না করে আদালতে পাঠিয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আব্দুল মালেক জানান, রউফসহ এই মামলার ছয় আসামি এখন কারাগারে। তাদের মধ্যে আল আমিন নামের একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত থেকে রউফের আত্মসমর্পণের নথি পাওয়া গেলে পুলিশ তাকে রিমান্ডে চাইবে।

তিনি বলেন, তার জামিনের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতের সিদ্ধান্তে সেই সময়-সীমা পর্যায়ক্রমে বর্ধিত হয়।

কী হয়েছিল সেদিন

ছাত্রলীগ নেতারা জানান, গত ১১ মার্চ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস ও সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার রায় মোটরসাইকেলে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যাচ্ছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন আব্দুর রউফ ও তাকবীর ইসলাম।

তারা গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে সেখানে তাকবীরের মোটরসাইকেলের সঙ্গে রউফের সমর্থক জাহিদ হাসানের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়।

এ সময় জাহিদের পক্ষ নিয়ে এগিয়ে আসেন আব্দুর রউফ। তিতাস ও অসীম তাদের মীমাংসা করে দেন।

ধুনটে নির্ধারিত কর্মসূচি শেষে ফেরার সময় আগেই বগুড়া চলে আসেন তাকবীর ও তার সহযোগীরা। তারা এসে শহরের সরকারি শাহ সুলতান কলেজের সামনে অবস্থায় নেন। বিষয়টি জানতে পেরে রউফ অন্য পথে শহরে ঢোকে।

এরপর তারা সাতমাথায় মুখোমুখি হন। সেখানে বাগবিতণ্ডা থেকে শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে তাকবীরসহ দুই গ্রুপের অন্তত নয়জন আহত হয়।

১৬ মার্চ বিকেল তিনটার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তাকবীর।

তবে এর আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার ডান পায়ে হাঁটুর নিচে ফ্র্যাকচার হইছে। ওখানে এসএস পাইপ আর রড দিয়ে মারছে; চাপাতি দিয়ে আঘাত করছে। বাঁ হাতের কবজিতে আর কনুইয়ের মাঝখানেও মারছে, সেখানে ফ্র্যাকচার হইছে। ওখানে দুটা সেলাইও পড়ছে।

‘মাথার পেছনে চারটা সেলাই পড়ছে, ওখানে চাপাতি দিয়ে আঘাত করছে। আমার কোমরের পাঁজরের নিচে দুই পাশেই ছুরির কোপ দিসে; আট ইঞ্চি করে ক্ষত হইছে। চার চারে আটটা সেলাই পড়ছে, কোপটা রউফ নিজেই দিছিল। শরীরে আরও অনেক জায়গায় ক্ষত হইছে, পুরা শরীরে পিটাইছে।’

এ ঘটনায় তাকবীরের মায়ের মামলার পর আজিজুল হক কলেজের ছাত্রলীগ সদস্য সোহাগ হাসান পাল্টা মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় তাকবীরকে।

ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, মোটরসাইকেলে ধাক্কা থেকে নয় জেলা ছাত্রলীগের আগামী কমিটিতে কে সভাপতি হবে তা নিয়েই এই খুনোখুনি। তাকবীর ও রউফ দুজনই সভাপতি পদের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।

২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর বগুড়ায় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়। সামনেই নতুন কমিটির সম্মেলন হওয়ার কথা।

জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসলাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রউফ এক সময় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল রাজী জুয়েলের সঙ্গে রাজনীতি করত। পরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তিতাসের সঙ্গে রাজনীতি শুরু করে। রাজনীতির শুরু থেকেই তিতাসের খুব ঘনিষ্ঠ মানুষ ছিল তাকবীর।’

তবে অসীম কুমার রায় বলেন, ‘তাদের দুজনের মধ্যে সভাপতি হওয়ার মনোবাসনা হয়তো ছিল। কিন্তু এটা আনুষ্ঠানিক কিছু নয়। এভাবে ছাত্রলীগের এক নেতা খুন হওয়ার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি ছাত্রলীগের জন্য ক্ষতি, আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতি, দেশের জন্যও ক্ষতি।’

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। ওই সময় আমি ও অসীম কুমার রায় ওই ঝামেলা মীমাংসা করে দেই। এরপরে আমরা আর কিছুই জানিনা। তা ছাড়া ওই মারপিটের ঘটনা ঘটেছে সাতমাথা এলাকায়।’

এ বিভাগের আরো খবর