গাইবান্ধার হাসপাতালে অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ এনে চিকিৎসক ও নার্সদের মারধর করা হয়েছে উল্লেখ করে মামলা হয়েছে।
সোমবার সকালে সদর থানায় একটি মামলা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) রজ্জব আলী।
এর আগে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোববার সন্ধ্যায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীর মৃত্যুর পর তার স্বজন ও বহিরাগতরা চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুইজন চিকিৎসককে মারধর করা হয়। লাঞ্ছিত করা হয় নার্সসহ কর্মচারীদের।
তবে এ ব্যাপারে পাল্টা অভিযোগ করেন স্বজনরা। তারা জানান, চিকিৎসকের গাফিলতিতে তাদের রোগী মারা গেছেন। পরে মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ করলে কর্তৃপক্ষের লোকজন তাদের উপর চড়াও হয়।
রোগীর স্বজন সাইদুর রহমান সুমন জানান, গাইবান্ধা সদরের বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম বাটিকামারী গ্রামের আলতাফ হোসেনের স্ত্রী জাহেদা বেগমকে গুরুতর অবস্থায় রোববার দুপুরে হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রোগীকে রক্ত দেয়া লাগবে বলে জানান চিকিৎসক। এ জন্য রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘রক্ত পরীক্ষা শেষে বিকেলে এক ব্যাগ রক্ত আনতে বলেন ডাক্তার। সন্ধ্যায় রক্ত নিয়ে এসে শুনি; খালা আর নাই।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত খালাকে তারা (কর্তৃপক্ষ) ভর্তি নেয় নাই। এ জন্য খালাকে চিকিৎসাও করে নাই ডাক্তাররা।’
এ দিকে মারধরের শিকার হাসপাতালের চিকিৎসক সুজন পাল জানান, রোগীর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকায় তার অবস্থা আগে থেকেই সংকটাপন্ন ছিল। সেই সময় হাসপাতালের ল্যাব বন্ধ থাকায় বাইর থেকে রক্ত পরীক্ষার জন্য বলা হয়।
বিকেলে স্বজনদের জরুরি ভিত্তিতে এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করতে বলা হয়। কিন্তু তারা রক্ত নিয়ে আসার আগেই রোগী মারা যান।
সুজন পাল বলেন, ‘রোগীর মৃত্যুর খবর শুনে স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে জরুরি বিভাগে হামলা চালান। এ সময় হাসপাতালের জরুরি কাগজপত্রের ফাইল ছিঁড়ে ফেলা হয়। পরে ডিউটিতে থাকা এক নারী চিকিৎসকসহ দুই জনকে মারধর করেন তারা। জরুরি বিভাগের বাইরে দায়িত্বরত শিক্ষানবিশ নার্সসহ কর্মচারীদেরও গায়ে হাত তোলেন রোগীর স্বজনরা।’
হামলাকারীদের বিচার দাবিতে চিকিৎসক ও নার্সরা ঘটনার পর প্রায় তিন ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখেন। এতে অন্য রোগী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্ববধায়ক তাহেরা আক্তার মনি বলেন, ‘অন্যান্য রোগীদের যাতে কোন সমস্যা না হয় সেজন্য জরুরি বিভাগ চালু রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় সদর থানায় এক জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।’
ওসি রজ্জব আলী বলেন, ‘ঘটনার পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ছাড়া আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।’