তিন-চার দিন ধরেই মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে শত শত দূরপাল্লার বাস। ঈদে ঘরমুখো মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতেই প্রায় আড়াই শ পরিবহন শ্রমিকের এই অপেক্ষা। কিন্তু এ বছর করোনা মহামারি ও গার্মেন্টসগুলো দেরিতে ছুটি হওয়ায় এখনও রিজার্ভ ভাড়া পায়নি সাভারের সড়কের পাশে অপেক্ষমাণ দূরপাল্লার বাসগুলো।
বাসমালিক-শ্রমিকরা জানান, ভাড়া না পেয়ে তিন-চার দিন ধরে বাস নিয়ে সড়কের পাশে অলস সময় পার করছেন তারা। অনাহার-অর্ধাহারেই কোনো রকমে দিন কাটছে তাদের। এই দুঃসময়ের মধ্যেই আবার পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।
আবার এদিক-সেদিক ঘুরে একই জায়গায় আসেন। তাদের অভিযোগ, পার্কিংয়ের জন্য যৌথভাবে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশকে তাদের এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। অনেকেই আবার পুলিশি আতঙ্কে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
কোরবানি ঈদ ঘিরে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকার গণপরিবহন চলাচলে অনুমতি দেয়। ওই দিন থেকেই আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের একপাশে নবীনগর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত শতাধিক উত্তরবঙ্গগামী দূরপাল্লার বাস রিজার্ভ ভাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। রোববারও সড়কটির বেশ কিছু স্থানে একই চিত্র দেখা গেছে।
জামালপুরগামী আর এস ট্রাভেলস বাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্টাফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিন দিন ধইরা আমরা পইড়াই রইছি, লোকজন নাই। এহেনে মনে করেন এক শর উপরে গাড়ি আছে। সব গাড়ির মইদ্দে মনে করেন ৪০০ লুক (লোক) আছে। সবটি গাড়ির মইদ্দে না খাওয়া রইছে স্টাফরা।'
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ সমস্যা করে। আমাদের গাড়ি মনে করেন ধাওয়ায়। গাড়ি রাখোন যায় না। এখেক পারকিনে এক, দুই, তিন হাজার ট্যাকা নেয়। এই ট্যাকাটা প্রশাসন কাউন্টার থাইকা নিয়া যায়গা। এইটা যৌথভাবে ভাগ হইয়া নিয়া যায়। হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক দোনোটাই মনে করেন যৌতকবাভে (যৌথ) নিয়া যায়।’
সাবিহা পরিবহনের বাসের চালক রহমত আলী বলেন, ‘অবস্থা খুব খারাপ। দুই দিন ধইরা টিপের লাইগা এহানে বইসা রইছি। কোনো কামাই-রুজি নাই। পোলাপানের খাওয়ার ট্যাকা দিতে পারতাছি না। গাড়িতে কোনো কামাই নাই।’
ভাড়া না পেয়ে তিন-চার দিন ধরেই বাস নিয়ে সড়কের পাশে অলস সময় পার করছেন বাসমালিক-শ্রমিকরা। ছবি: নিউজবাংলাতিনি আরও বলেন, ‘গার্মেন্ট অহোনো ছুটি হয় নাই। লোকজন নাই এই রোডে। আমিসহ চারজন স্টাফ আছে গাড়িতে। প্রতিদিন গাড়ির পিছে ১২০০ থেকে ১৪০০ ট্যাকা খরচা আছে।’
সাভার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আব্দুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নবীনগরের পর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত কোনো ট্রাফিক পুলিশ নাই। বাইপাইল ও নবীনগর মোড়ে আছে। এ ছাড়া মাঝখানে কোনো ট্রাফিক পুলিশ নাই। হাইওয়ে পুলিশ মাঝে মাঝে যায়।’
সাভার হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ করিম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘২৫০টি বাস আছে এখানে। গার্মেন্টস ছুটি হইলেই এরা চলে যাবে। ওইখানে আমার হাইওয়ের কোনো পুলিশ নাই। জেলা পুলিশ দাঁড়ায় দাঁড়ায় এই কাজগুলা করতেছে।’
তবে এ বিষয়ে জেলা পুলিশের আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলামকে ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।