বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দাদির মামলায় মা জেলে বাবা ফেরারি, দুই শিশু সড়কে

  •    
  • ১৮ জুলাই, ২০২১ ১০:৩৪

জানা যায়, জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে আলিফ ও গালিফের বাবা মনিরুজ্জামান জুয়েল ও মা অনিতা জামানের সঙ্গে দাদি আলেয়া বেগম ও ফুফু মনিরা বেগমের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে মামলা করেছেন দাদি আলেয়া। সেই মামলাতে অনিতা এখন কারাগারে আর জুয়েল ফেরারি।

পারিবারিক কলহের জেরে সহিংসতা। তারপর দাদির করা মামলায় মা কারাগারে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় বেসরকারি চাকরিজীবী বাবা ফেরারি। আর এসব মারপ্যাঁচে অবুঝ দুই শিশু সন্তান আলিফ ও গালিফ ঘুরছে রাস্তায় রাস্তায়।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে শনিবার দিনভর শহরের টাউনহল এলাকার ‘অগ্নিঝরা একাত্তর’-এর পাদদেশে অবস্থান নেয় শিশু দুটি। বিকেলের দিকে তারা অবস্থান নেয় বরগুনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে।

অসহায় দুই শিশুর করুণ পরিণতি দেখতে সেখানে ভিড় জমায় শ শ উৎসুক জনতা। সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই শিশুর দায়িত্ব কেউ না নেয়ায় তাদের ঠাঁই হয় বরগুনা প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি সোহেল হাফিজের বাসায়।

জানা যায়, জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে আলিফ-গালিফের বাবা মনিরুজ্জামান জুয়েল ও মা অনিতা জামানের সঙ্গে দাদি আলেয়া বেগম ও ফুফু মনিরা বেগমের মধ্যে বিরোধ চলছিল।

আলেয়া তার মেয়ের পক্ষ নিয়ে ছেলে জুয়েল, পুত্রবধূ অনিতাসহ নাতিদের নিয়ে বসতঘর ছাড়তে বলেন।

অনিতার দাবি, ওই বাড়ি তার বাবার টাকায় নির্মিত। এ নিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে তর্ক বাঁধে। একপর্যায় শাশুড়ি ঘর তালাবদ্ধ করে রাখেন।

পুত্রবধূ অনিতা দুই শিশু ছেলে নিয়ে তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করতে গেলে শাশুড়ি আলেয়া ও ননদ মনিরা বাধা দেন। এ নিয়ে তর্ক ও ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে ঘরের দেয়ালে আঘাত পেয়ে দাদি আলেয়ার দাঁত ভেঙে যায়।

এ ঘটনার দাদি আলেয়া ছেলে মনিরুজ্জামান, পুত্রবধূ অনিতা ও নাতি আলিফের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় মারধরের অভিযোগে একটি মামলা করেন। সে মামলায় গত বৃহস্পতিবার আলিফ-গালিফের মা অনিতাকে জেলহাজতে পাঠায় আদালত।

পারিবারিক এই টানাপোড়েনে সবচেয়ে বেশি ভুগছে দুই ছেলে আলিফ-গালিফ। বিষয়টি অবগত আছেন আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন।

মোশাররফ জানান, শিশু আলিফ ও গালিফের নানার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। বরগুনায় তার দাদিরবাড়ির স্বজন ছাড়া আর কেউ নেই।

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, একদিকে আলিফ-গালিফের দাদি ও ফুফুরা। অন্যদিকে, আলিফ ও গালিফের বাবা-মা। জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের কারণে পারিবারিকভাবে দুই পক্ষের বিরোধ চরমে পৌঁছালে উভয় পক্ষই মারমুখী হয়ে ওঠে। পরে দাদি আলেয়া বেগমের করা মামলায় মা অনিতা জামান কারাগারে যান।

মামলায় ১২ বছর বয়সী আলিফকে ১৮ বছর দেখিয়ে তাকেও আসামি করা হয়েছে বলেও জানান ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ।

আলিফ বলছে, তার ফুফুরাই তার মাকে মারধর করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলিফ ও গালিফের বাবা মনিরুজ্জামান জুয়েল গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মামলায় ঘটনার যে সময় দেখানো হয়েছে, সে সময় জুয়েল তার কর্মস্থলে ছিলেন। সেখানে ডিজিটাল হাজিরায় তার হাজিরা রয়েছে। মামলাটিতে তার নামে ওয়ারেন্টও রয়েছে।

এ অবস্থায় দুই বছরের ছোট ভাই গালিফকে নিয়ে চরম অসহায়ত্বে দিন কাটছে আলিফের। মামলা থেকে মায়ের মুক্তির দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে দুই ছেলে আলিফ ও গালিফ।

আলিফ জানায়, বাবার চাকরির সুবাদে তারা গাজীপুরে বসবাস করে। সেখানকার একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের একটি স্কুলে লেখাপড়ারও সুযোগ পেয়েছে বলে জানায় আলিফ। তার ভিসাও প্রস্তুত। করোনার কারণে তার ইংল্যান্ড যেতে দেরি হচ্ছিল।

আলিফ আরও জানায়, তার বয়স এখন ১২ বছর। অথচ মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলায় তার বয়স ১৮ বছর দেখিয়ে তাকে আসামি করা হয়েছে।

আলিফ-গালিফের দাদি আলেয়া বেগম বলেন, ‘মোরে মাইররা ঘরদিয়া নামাইয়া দেছে ওরা কয় মায়-পোয়। মোর স্বামীর ভিডায় কি মুই থাকমুনা? হেই জইন্নে মুই কোর্টে প্রতিকার চাইয়া মামলা করছি, আদালত আইনগত ব্যবস্থা নেছে, হ্যাতে মোর কী দোষ! ওরা মোরে ঘরছাড়া হরছে। মুই আর মোর মাইয়ারে কেউন্নাইয়া ঘরছাড়া হরবে মুই আদালত ছাড়া কুম্মে যামু!’

এ বিষয়ে দুই পক্ষের আইনজীবী জানান, করোনার সময়ে দুই-তিন মাস ধরে শিশু আালিফ-গালিফকে নিয়ে মা অনিতা জামান বরগুনায় তাদের গ্রামের বাড়ি আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামে থাকছেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, ‘ভুক্তভোগী দুই শিশু আলিফ এবং গালিফের চাচা ও ফুফুদের পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে এ মামলা করা হয়েছে। দুগ্ধপোষ্য শিশু এবং করোনাকালে একজন নারীর অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলাম। আদালত জামিন দেয়নি। আগামীকাল আবারও আসামিপক্ষে জামিন আবেদন করা হবে।’

বাদী পক্ষের আইনজীবী মিসকাত সাজ্জাদ জানান, করোনার সময়ে দুই তিন মাস ধরে শিশু আালিফ ও গালিফের বাবা-মা বরগুনায় থাকছেন। জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে আলিফ ও গালিফের বাবা মনিরুজ্জামান জুয়েল ও তার মা-বোনদের মধ্যে কলহ চলছিল। আলিফের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বৃদ্ধ দাদিকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শিশু আলিফ ও গালিফের অসহায়ত্বের কথা ভেবে মানবিক কারণে বরগুনা প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি সোহেল হাফিজ ও তার স্ত্রী জাফরিণ নিতু আপাতত তাদের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা আলিফ ও গালিফের জন্যে বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকমের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’

এ বিভাগের আরো খবর