বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভালো চাকরির নামে সৌদিতে নিয়ে ‘প্রতারণা’

  •    
  • ১৭ জুলাই, ২০২১ ২৩:৩৭

মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় দুপুরে প্রধান আসামি সবুজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার চককালিদাস গ্রামের বাসিন্দা তিনি। মামলার অন্য আসামিরা হলেন সবুজের মা রাবেয়া বেগম এবং একই গ্রামের আব্দুল খালেক ও আবুল কালাম আজাদ।

সৌদি আরবে নিয়ে বৈধ কাগজপত্র ও ভালো চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল লাখ লাখ টাকা। সৌদিতে নেয়াও হয়।

তবে সেখানে নেয়ার পর বৈধ কাগজ ও চাকরি দূরের কথা, তাদের দিয়ে বাধ্যতামূলক কাজ করানো হচ্ছে, বিনিময়ে থাকা খাওয়ার জন্য দেয়া হচ্ছে নামমাত্র টাকা।

নওগাঁর এক প্রবাসীর বিরুদ্ধে এভাবে ১৯ জনের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শনিবার এ নিয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানায় অভিযোগ দেয় সাতজনের পরিবার। পরে তাদের পক্ষে মানব পাচার দমন আইনে মামলা করেন নওগাঁ সদর উপজেলার চকরামকানু গ্রামের সিরাজুল ইসলাম।

মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় দুপুরে প্রধান আসামি সবুজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি সদর উপজেলার চককালিদাস গ্রামের বাসিন্দা।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন সবুজের মা রাবেয়া বেগম এবং একই গ্রামের আব্দুল খালেক ও আবুল কালাম আজাদ।

এজাহারে বলা হয়, সিরাজুলের ছেলে রুবেল হোসেনকে সৌদি আরবে নিয়ে ভালো বেতনে কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ২০১৯ সালে ছয় লাখ টাকা চান সবুজ হোসেন। কথা মতো ৬ লাখ টাকা তার মা রাবেয়া বেগমের কাছে দেয়া হয়।

ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর রুবেলকে সৌদিতে নিয়ে যান সবুজ। তবে এখন পর্যন্ত বৈধ কাগজপত্র ও চাকরি দিতে পারেননি তিনি। বর্তমানে অবৈধভাবে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।

শুধু রুবেল নয়, এ চক্রের খপ্পরে পড়েছেন আরও ১৯ জন। তাদের মধ্যে রুবেলের পরিবারসহ সাতজনের পরিবার অভিযোগ দিয়েছে।

বাকি ছয়জন হলেন চক কালিদাস গ্রামের আয়নাল হোসেন, হোসেন আলী, জিয়াউর রহমান, আইজুল মন্ডল, জুয়েল হোসেন ও সাইদুল ইসলাম।

এজাহারে বলা হয়েছে, ওই সাত জনকে সৌদিতে নিয়ে জোরপূর্বক নিজের তত্ত্বাবধানে কাজ করাচ্ছেন সবুজ। তবে তাদের মাসিক কোনো পারিশ্রমিক দেয়া হচ্ছে না। খাবারের জন্য সামান্য কিছু টাকা দেয়া হয়।

কাজ না থাকলেও অনেক সময় তাদের না খেয়ে থাকতে হয়। এ ছাড়া এক সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে ১০-২০ জনকে।

অন্যস্থানে কাজ করা বা বৈধ কাগজপত্রের কথা বলায় তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন সবুজ। কাজ না করলে অবৈধ হিসেবে ধরিয়ে দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে তাদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে গত ২৫ জুন সবুজ দেশে ফিরলে তার বাড়িতে যান ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। তাদেরকে সেখান থেকে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা

সিরাজুল জানান, সবুজ দেশে ফিরেছেন জানতে পেরে টাকা দেয়া ১৯ পরিবারের সদস্যরা তার বাড়িতে যান। সেখানে তারা সৌদিতে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের কাজের ব্যবস্থা বা দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

তখন সবুজ বলেন, ‘আমি যাদের বিদেশে নিয়ে গিয়েছি তাদের অনেকেই ভালো আছে। কাজ করছে। আর যাদের সামান্য সমস্যা আছে তাদের বিষয়ে বিদেশে গিয়েই সমাধান করব।’

ওই সময় তার বাড়িতে গিয়ে ঝামেলা করতে নিষেধ করে তাদের তাড়িয়ে দেয়া হয়। প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দেয়ার হুমকিও দেন সবুজ।

সৌদিতে অবস্থানকারী আয়নাল হোসেনের বাবা আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমার ছেলেকে সৌদিতে ভালো কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ২০২০ সালের জুন মাসে ৭ লাখ টাকা নেয়। সেই সময় সবুজ সৌদিতে ছিল। টাকাগুলো তার কথা অনুযায়ী, তার মা রাবেয়া বেগমকে দিয়েছিলাম।

‘আমার ছেলেকে সৌদি নিয়ে কাজ তো দূরের কথা কোনো বৈধ কাগজই করে দেয়নি। এখানে যে কোম্পানির নিয়োগপত্র পাঠিয়েছিল তা পুরোটাই ভুয়া। সেটা আমরা কেউই বুঝতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে মাঝে মাঝে ফোন করে অনেক কান্নাকাটি করে আর বলে আব্বা সবুজ আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। আব্বা আমাকে দেশে দিয়ে যান। এখানে থাকলে আমি বাঁচব না। বাবা হয়ে সন্তানের এমন কান্না আমি সহ্য করতে পারছি না।’

সাইদুল ইসলামের স্ত্রী নিপা বেগম জানান, ‘চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমার স্বামীকে সৌদিতে ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়ে যায়। তার পর আবার কাগজপত্র (আকামা) ঠিক করার কথা বলে আরও তিন লাখ টাকা নেয়। ছয় মাস কাজ করায় ৩ লাখ টাকা পাওনা হলেও সবুজ তা দেয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী বর্তমানে খুব কষ্টে আছে। আমরা গরীব, বাড়িতেও টাকা দিতে পারছে না। অনেক কষ্টে সংসার চলছে। আমরা সবুজসহ প্রতারণাকারীদের বিচার চাই।’

নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল জানান, প্রধান আসামি সবুজকে গ্রেপ্তারের পর বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ওসি আরও জানান, এই চক্র ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯ জনকে বিদেশে নিয়ে প্রতারণা করেছে। তাদের কাছ থেকে প্রায় ৭৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

প্রতারণার শিকার ওই ১৯ জন বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। তাদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এ কারণে তারা সৌদিতে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর