জেলার চাহিদা মিটিয়ে রংপুরের কোরবানির পশু বিক্রি হতো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। করোনা মহামারির কারণে বিধিনিষেধে ব্যাপারিরা আসতে না পারায় এবার গরুসহ অন্যান্য পশু বিক্রি কম হচ্ছে। অতিরিক্ত পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, রংপুরের আট উপজেলায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ২ লাখ ৩০ হাজার। সেই চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত পশু প্রস্তুত আছে আরও ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯৭টি।
এর মধ্যে ষাঁড় ১ লাখ ৪০ হাজার ৪৬৮টি, বলদ ৪৬ হাজার ৮৭৮টি, গাভি ৫৮ হাজার ৬১০টি, ভেড়া ৩৬ হাজার ৪০৫টি, মহিষ ৩১৪টি আর ছাগল ১ লাখ ১৪ হাজার ১২২টি।
জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮ হাজার ৫৯৬ জন খামারি রয়েছেন। ঈদুল আজহা সামনে রেখে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান, ব্রাহমা, শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান, জার্সি ও শংকরসহ দেশীয় জাতের গরু পালন করেছেন তারা।
কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে এলেও লকডাউনের কারণে পশু বিক্রি করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।
তাদের অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইনে পশু কেনাবেচার আয়োজন করলেও খুব একটা সাড়া মেলেনি। ফলে লাখ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেনে তারা।
১৫ জুলাই থেকে সরকার লকডাউন শিথিল করেছে। জেলার ৩৬টি জায়গায় বসতে শুরু করেছে কোরবানির হাট।
রংপুরের কাউনিয়ার খানসামার হাট, পীরগাছার দেউতির হাট, নিশবেতগঞ্জ হাটে গিয়ে দেখা গেছে, গরুসহ কোরবানির পশু উঠেছে হাজার হাজার। সে তুলনায় বিক্রি নেই। ক্রেতাও নেই আগের মতো।
পীরগাছার দেউতি হাটে আসা খামারি শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাটোত অনেক মানুষ তো ...সব মানুষ তো গরু কিনবের আইসে নাই। একটা গরুর সঙ্গে তিনটা মানুষ। ক্রেতা কম, দামও কম। বাইরে থেকে পাটি কম। ওমরা যদি নাই আইসে দাম তো বাড়বে না। গরুর ঠিকমতন দাম না পাইলে লোকসান হবে।’
কালু মিয়া নামের আরেক খামারি জানান, ঈদের জন্য পাঁচটি গরু মোটাতাজা করেছেন তিনি। নিজে ঠিকমতো না খেয়ে গরুর পেছনে ব্যয় করেছেন অর্থ ও শ্রম। এখন দেশের যে অবস্থা, তাতে সঠিক দাম না পেলে পথে বসতে হবে তাকে।
নিশবেতগঞ্জ হাটে কথা হয় খামারি রেওয়ানুল হক সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে খামারের পেছনে খরচ করেছি তা যদি না ওঠে, তালি লোন শোদ করব কীভাবে। যে গরুর দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা সেই গরুর দাম বলছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। লাভ তো দূর, পূঁজিও হারাবে হামাগের।’
রংপুর খামার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লতিফুর রহমান মিলন বলেন, ‘করোনার কারণে কোরবানি দেয়ায় আগ্রহ কম মানুষের। সে কারণে এ বছর কোরবানির উপযুক্ত সব পশু বিক্রি না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংকঋণ সুবিধা, গোখাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করলে পরে খামারিরা লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবে।’
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে পশু বিক্রির জন্য ১১টি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও বিক্রি কম। সাধারণ মানুষতো এত কিছু বোঝে না।
‘তবে স্বস্তির কথা, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসতে শুরু করেছেন। খামারিরা গরু বিক্রি করছেন। আশা করছি, খামারিরা ন্যায্য দাম পাবেন। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’