কুড়িগ্রামের উলিপুর ও নাগেশ্বরীতে বিদ্যালয়ের মাঠে গরুর হাট বসানোর পর বেহাল দশা হয়েছে মাঠগুলোতে থাকা শহীদ মিনার ও বিজয় স্তম্ভের। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা।
তারা বলছেন, প্রশাসন এবং হাট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে বিজয় স্তম্ভ এবং শহীদ মিনারে সাধারণ মানুষ জুতা পায়ে উঠছে। মিনারের বেদিতে কেউ কেউ পান-বিড়ি-সিগারেট বাদামের দোকান বসিয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে উলিপুরের দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে বসেছে গরুর হাট। এর এক পাশে থাকা শহীদ মিনারে বিভিন্ন বয়সের মানুষের জটলা। এদের অনেকেই জুতা পায়ে ওপরে উঠেছেন। দোকান বসিয়ে পান-সিগারেট বিক্রি করছেন দুজন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা।
জুতা পরে ওঠাদের একজন নিজের ভুল স্বীকার করে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাবা এটা হামার অন্যায় হইছে। কি করমো? হাটের মধ্যে বসার কোনো জায়গা নেই। তাই সবার দেখিয়া উঠছি।’
ছাগল কিনে শহীদ মিনারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা শহিদুল আলম বলেন, ‘পরিবশেটাই এমন। আসলে এটা আমাদের ঠিক হয়নি। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ভাষা শহীদদের প্রতি অমর্যাদা হচ্ছে।’
গরু বিক্রি করতে আসা আলম মিয়া বলেন, ‘শহীদ মিনারে স্যান্ডেল পড়ে ওঠা নতুন না। প্রতি হাটে মানুষ শহীদ মিনারে এভাবে ওঠানামা করে। কিন্তু হাট এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শহীদ মিনারের অবমাননা করলেও কেউ দেখে না।’
উলিপুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফয়জার রহমান বলেন, ‘শহীদ মিনারে জুতা, স্যান্ডেল পরে ওঠা এটা জাতিকে অপমান করা। হাট এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে।’
কুড়িগ্রামে নাগেশ্বরীতে ট্রাকে গরু উঠানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বিজয় স্তম্ভ। ছবি: নিউজবাংলা
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী উৎপল সরকারকে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
উপজেলার সহকারী কমিশন (ভূমি) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘আমি দুর্গাপুর গরুর হাটে এখানেই এসেছি। শহীদ মিনারে জুতা, স্যান্ডেল পড়ে ওঠার বিষয়টি তার জানা নেই। আমি সেখানে গিয়ে দেখছি এবং ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
উলিপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরে-এ-জান্নাত রুমি বলেন, ‘আমাকে কেউ বলেনি। এইমাত্র শুনলাম। শহীদ মিনারের সম্মান ক্ষুণ্ণ করতে না পারে এজন্য আমি উদ্যোগ নেব।’
একই দিনে নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার কেন্দ্রীয় স্বাধীনতার বিজয় স্তম্ভকে অবমাননার অভিযোগ উঠেছে।
বিজয় স্তম্ভটির সামনের বেদিতে ট্রাকে গরু উঠানো নামানোর কাজে ব্যবহার করছেন গরু ব্যবসায়ীরা। এতে বেদির ওপর গরু মানুষের ওঠানামা এবং গরুর গোবর দিয়ে বেদিসহ বিজয় স্তম্ভটি নোংরায় পরিণত হয়। বেদিটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রতিদিন এই হাটে শতাধিক গরু বেচাকেনা হয়ে থাকে। গরু ওঠানোর কাজে বিজয় স্তম্ভের বেদি ব্যবহার করছেন ব্যবসায়ী মোখলেসুর রহমান এবং কচাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান।’
অভিযোগের বিষয়ে ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমার ১২টি এবং আতাউর রহমানের তিনটি গরু ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাকটি ভাড়া করা হয়েছে। ইটের গাথা এই স্থানটি উঁচু হওয়ায় গরু তুলতে সুবিধা। তাই ট্রাক এখানে লাগানো হয়েছে। এই স্থানের অর্থ আমরা বুঝতে পারি নাই।’
আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান জানান, তিনি তিনটি গরু ঢাকায় তার আত্মীয়ের বাসায় পাঠাবেন বলে এই ট্রাকে দিতে এসেছেন। তিনি আসার আগেই ট্রাকটি বেদিতে লাগিয়ে গরু তোলার কাজ শুরু হয়েছে। আসলে এখানকার কেউ এই স্তম্ভের মর্ম বুঝতে পারেনি।
কচাকাটা জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির কোষাধ্যক্ষ মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিজয় স্তম্ভের বেদি ব্যবহার করে ট্রাকে গরু ওঠানো বিষয়টি হৃদয় বিদারক। সেখানে উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিরাও ছিল। কেউ নিষেধ করার ছিল না। পরে সংবাদ পেয়ে আমরা কয়েকজন সেখানে গিয়ে তাদেরকে সতর্ক করে দেই এবং ট্রাকটি সরিয়ে দেই। পরে ব্যবসায়ীদের বেদিসহ পুরো চত্বর পরিষ্কার করে দিতে বলি।’