ঈদ উপলক্ষে গরিব ও দুস্থদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ভিজিএফের চাল কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জ পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে।
প্রত্যেককে ১০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও মেয়র রমজান আলী দেড় থেকে দুই কেজি চাল কম দিচ্ছেন বলে অভিযোগ সুবিধাপ্রাপ্তদের। তবে পৌর মেয়রের দাবি, চাল কম দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মানিকগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয় থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৪৬ দশমিক ২১ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছে মানিকগঞ্জ পৌরসভা। এই চাল প্রতিজন ১০ কেজি হিসেবে পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডের ৪ হাজার ৬২১ জন পাবেন।
ওই চাল নিতে শুক্রবার সকাল থেকে মানিকগঞ্জ পৌরসভার সামনে হাজির হন হাজারও মানুষ। গাদাগাদি করে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই তারা অপেক্ষা করেন দীর্ঘ সময়। এরপর চাল পেলেও বাইরে তা মাপার পর দেখা যায়, ওজনে কম দেয়া হয়েছে। অনেকে আবার দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও ফিরেছেন খালি হাতে।
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মত্ত এলাকার চন্দ্রবান বলেন, ‘আমারে চাইল দেয়ার কতা আছিল ১০ কেজি। দিছে ৮ কেজি। এই চাইল দিছে রমজান চেয়ারম্যান। যা দিছে তাই নিয়্যা যাইতেছি।’
মত্ত এলাকার রোকেয়া বেগম জানান, চাল দেয়ার পর তার কাছে কম লাগায় স্থানীয় একটি দোকানে নিয়ে যান। সেখানে মাপা হলে ১০ কেজির পরিবর্তে ৮ কেজি ৬৪ গ্রাম পাওয়া যায়। আরও কয়েকজন মাপলেও একই পরিমাণ চাল পাওয়া যায়।
একই ওয়ার্ডের বকজুরি এলাকার জহুরা আক্তার বলেন, ‘সকালে আইস্যা লাইনে দাঁড়ায়ছিলাম। পরে আমার সিরিয়াল আইলে আমি যাইয়্যা ব্যাগ ধরতে এক বালতি চাইল ব্যাগে ঢাইলা দেয়। আমিও নিয়্যা আসি। কতা কইলে তো পরে আর চাইল দিব না। তাই কিছু কমু না।’
৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব দাশড়া এলাকার রিমলা বেগম রায় বলেন, ‘ছিলিপে লেখা আছে ১০ কেজি। আমরা পাইছি ৮ কেজি। এইডা নিয়্যা তো আমাগো কিছু কওয়ার নাই। আমরা তো তেলাপোকা, আমরা কিছু কইতে পারুম না।’
খালি হাতে ফিরছিলেন বকজুরি এলাকার হালিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘চাইল নেয়ার জন্যে হেই সকালে আইছিলাম। সারা দিন অপেক্ষা কইরা খালি হাতে ফিরতাছি। আবার কালকে আইতে হইব। এই রোইদের মধ্যে দাঁড়াইয়া থাকতে আমাগো কষ্ট লাগে না?’
উড়িয়াজানির এলাকার অনিতা রানী দাশ বলেন, ‘বয়স হয়ে যাওয়ায় ঠিকমতো একা চলতে পারি না। তার মধ্যেও চাইল নেয়ার আশায় আইছি। সারা দিন রোইদে দাঁড়াইয়্যা আর মাইনষের মধ্যে থাইক্যা খালি হাতে চইল্যা যাইতেছি। ভগবান জানে কবে এই চাইল পামু। না খালি ঘুইরা যামু।’
নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর মেয়র রমজান আলী বলেন, ‘চাল কম দেয়ার কোনো সুযোগ নাই। যারা চাল কম দিব, ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। যদি চাল কম পড়ে, দরকার হলে আমি চাল কিনে দিব।’
তিনি আরও বলেন, ‘চাল পাওয়ার পরে অনেকে অনেক ধরনের কথা বলে। যদি কেউ চাল কমের কথা বলে, সে যেন পৌরসভার ভেতরেই বলে। বাইরে তো কম বেশির কথা বলবেই।’