করোনার উচ্চ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে রংপুর জেলায় কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ৩৫টি গরুর হাট বসছে। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসছে বড় অন্তত ১০টির বেশি হাট। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। হাটে হাটে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ক্রেতা-বিক্রেতা।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, রংপুর বিভাগে গত ১২ দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে অন্তত ৫০০ মানুষ। করোনা উপসর্গের রোগী গ্রামের ঘরে ঘরে। অথচ এখনও সচেতনতা আসছে না সাধারণ মানুষের মধ্যে।
১৫ জুলাই থেকে লকডাউন শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এর পরপরই মানুষের ঢল নামে হাটবাজারে।শুক্রবার পীরগাছার দেউতি হাট, রংপুরের নিশবেতগঞ্জ, কাউনিয়ার হারাগাছ খানসামা হাটসহ কয়েকটি হাটে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। হাটে আসা কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। গাদাগাদি করে বসেছে পশুর হাট। মুখে মাস্ক তো দূরের কথা, একে অপরের সঙ্গে গায়ে গা লাগিয়ে হাটে প্রবেশ করেছে। প্রতিটি হাটে হাজারো মানুষের ভিড়।স্থানীয় লোকজন জানান, ইজারাদারের পক্ষ থেকে সুরক্ষাব্যবস্থা নেই, প্রবেশপথে রাখা হয়নি হাত ধোয়ার পানি ও সাবান। শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র নেই। হাটজুড়ে রয়েছে শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষের অবাধ চলাচল।
পশুর হাট পরিচালনায় সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। তবে রংপুরজুড়ে সে আদেশ নিষেধ পুরোপুরি উপেক্ষিত।
রংপুরের দেউতি হাটে গরু কিনতে বগুড়া থেকে এসেছেন সৈইফুর রহমান। তার মুখে মাস্ক নেই। তিনি বলেন, ‘এই যে মাস্ক আছে পকেটে। মাস্ক পরা আমাদের জন্য ভালো, কিন্তু গরমে পরা যায় না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার।’সাকিব আকন্দ নামে একজন বলেন, ‘কেমন করি হাটোত স্বাস্থ্যবিধি মানবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হলে হাটের জায়গা বড় করতে হবে। জায়গা কম, খালি স্বাস্থ্যবিধি মানবের কইলে তো হবে না। ছোট জায়গায় মানুষ বেশি। তা ছাড়া মানুষ যদিল না মানে প্রশাসন কী করবে?’
নিশবেতগঞ্জ হাটে জব্বার আলী নামের একজন বলেন, ‘কোরবানির জন্য গরু কিনতে এসেছি। কিন্তু হাটে তো কোনো স্বাস্থ্যবিধি নেই। এত মানুষ দেখে ভয়ও লাগছে। পুরো হাটে মানুষে মানুষে একাকার। যেহেতু লকডাউন নেই, তাই হাটে-বাজারে মানুষ বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের নজর দেয়া উচিত। তা না হলে ঈদের পর হাসপাতালে জায়গা খুঁজতে খুঁজতে অনেককে তার প্রিয়জন হারাতে হবে।’রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবু মো. জাকিরুল ইসলাম জানান, ‘রংপুর বিভাগে গত চার দিনে সংক্রমণ কমেছে। কিন্তু মানুষ হাটে যেভাবে চলাফেরা করছে, তাতে সংক্রমণ বাড়তে পারে। মানুষকে সচেতন করার জন্য হাট কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে, মাইকে প্রচার করতে হবে। আমরা সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কায় আছি।’রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। শুধু আইন নয়, মানুষকে সচেতন হতে হবে।’