ফেনী শহরের সুলতানপুর এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার গুলিতে কিশোরগঞ্জের এক গরু ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত গরু ব্যবসায়ীর নাম মো. শাহজালাল।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সাগুলী গ্রামের আব্দুল জব্বারের ২২ বছর বয়সী ছেলে শাহজালাল। ঘটনাটি এরই মধ্যে গ্রামের মানুষের মুখে মুখে চাউর হলেও শাহজালালের বাবা-মা জানেন তাদের ছেলে জীবিত।
মা-বাবা জানেন ফেনী যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় খানিকটা ব্যথা পেয়েছেন শাহজালাল। শনিবারই বাড়ি ফিরবেন।
নিহত শাহজালালের চাচাতো ভাই শিক্ষক আজিজুল হক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে একটি ট্রাকে করে এলাকার ৮-১০ জন গরু ব্যবসায়ীকে নিয়ে ফেনীর উদ্দেশে রওনা হন সুতারপাড়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন নয়ন। ট্রাকে গরু ছিল ২০টি। এর মধ্যে বেশির ভাগ গরু নয়ন মেম্বারের খামারের। বাকি গরু অন্য ব্যবসায়ীদের।
তিনি বলেন, ‘শাহজালাল মূলত কৃষিকাজ করেন। কৃষিকাজের ফাঁকে গরুর ব্যবসা করেন। গরুগুলো ভালো দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে ফেনী গিয়ে আমার ভাই লাশ হয়ে ফিরবেন, এমনটা কোনো দিন কল্পনাও করিনি।’
আজিজুল জানান, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শাহজালাল সবার বড় এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। শাহজালাল বিয়ে করেছেন বছর দেড়েক আগে। ছোট বোন মরিয়মেরও বিয়ে দিয়েছেন শাহজালাল। এখন ৮ বছর বয়সী ছোট ভাই শাহপরানকে মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন ছিল তার।
তিনি আরও বলেন, ‘শাহজালালের বাবা-মা দুজনই বয়োবৃদ্ধ। স্ট্রোকের রোগী। তাই শাহজালালের মৃত্যেুর খবর তাদের জানানো হয়নি।
‘এই খবর জানলে আবার যদি স্ট্রোক করেন, তবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে। তাই তাদের জানানো হয়েছে শাহজালাল গরুর গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে খানিকটা ব্যথা পেয়েছে। আগামীকালই বাড়ি ফিরবে।’
এই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের যেন আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দেয়া হয়, সেই দাবি করেন আজিজুল।
নিহত শাহজালালের শ্বশুর শাহ আলম বলেন, ‘মাত্র বছর দেড়েক আগে তার সঙ্গে আমার মেয়েটার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর থেকে সুন্দরভাবেই চলছিল তাদের সংসার। কে জানত এত অল্প সময়ের মধ্যেই আমার মেয়েটা বিধবা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পুরো পরিবারটা চালাইত শাহজালাল। এখন তার পরিবারটাই বা কেমনে চলবে আর আমার মেয়েটার কী গতি হবে? আল্লাহ আমার মেয়েটাকে যারা অল্প বয়সেই বিধবা করেছে, তুমি তাদের বিচার করো।’
নিহত শাহজালালের সঙ্গে থাকা তার আরেক চাচাতো ভাই ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন নয়ন নিউজবাংলাকে জানান, প্রতিবছরই ঈদের আগে তারা গরু নিয়ে ফেনীতে বিক্রি করতে যান। গতকাল রাত ২টার দিকে ফেনী শহরে ঢোকার আগে সাহেববাড়ী মোড় থেকেই দুটি মোটরসাইকেলে করে পিছু নেয় তিন-চারজন ব্যক্তি। পরে সুলতানপুর পর্যন্ত যাওয়ার পরেই গরুর ট্রাকটিকে গতিরোধ করে আবুল কালাম আজাদসহ মোটরসাইকেলে থাকা লোকগুলো।
তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে তারা ট্রাকের চাবি কেড়ে নিতে চাইলে আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে তর্ক হয়। তখন ট্রাক থেকে নামতে বলা হয় আমাদের। ট্রাক থেকে নামার পর কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।
‘এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা অন্য লোকগুলোও গালিগালাজ শুরু করে। তখন আমি প্রতিবাদ করলে হঠাৎ করেই কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তখন আমি পড়ে যাই। আমার পেছনেই ছিল ছোট ভাই শাহজালাল। আর এতেই গুলিবিদ্ধ হয় সে। আর গুলির শব্দে আমার সঙ্গে থাকা সবাই এদিক ওদিক দৌড়ে প্রাণ বাঁচায়। পরে সকালে একটা পুকুরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শাহজালালের মরদেহ পাওয়া যায়।’