কুমিল্লা সদর উপজেলার বানিপুর গ্রামের কলেজছাত্র আবদুল্লাহ আল-ফরহাদ রিফাতের গলাকাটা মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল ২০১৫ সালের ৯ মার্চ। এর পর কেটে গেছে ছয় বছর। তবে হত্যার কারণ বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এর মধ্যে মামলাটি তদন্ত করেছে থানা পুলিশ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা ব্যর্থ হওয়ায় ২০২০ সালে তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
অবশেষে হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে সংস্থাটি। এক আসামিকে গ্রেপ্তারের পর তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয়ে হত্যার বিস্তারিত জানান তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. হিলাল উদ্দিন।
নিহত রিফাত স্থানীয় উপজেলার জোড়কানন পশ্চিম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত মিজানুর রহমানের ছেলে। সে স্থানীয় চৌয়ারা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
রিফাতের মা জোসনা বেগম জানান, ২০১৫ সালের ৬ মার্চ দুপুরে রিফাত মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। পরে জানতে পারেন, বন্ধুদের সঙ্গে ভারত সীমান্ত এলাকায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। তবে ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর ৯ মার্চ সকালে উপজেলার সোনাইছড়ি খালের মধ্যে তার মরদেহ পাওয়া যায়।
পুলিশ জানায়, মরদেহ উদ্ধারের দিনই জোসনা বেগম অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। প্রথমে থানা পুলিশ এবং পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলাটির তদন্ত করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
স্বাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় ২০২০ সালে ওই তিনজনকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। তবে বাদী আদালতে নারাজি আবেদন করলে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হিলাল উদ্দিন জানান, মামলাটি ছিল একেবারেই ক্লু-লেস। সবশেষ সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকেলে সদর দক্ষিণ থানার ধনপুর গ্রামের শাহজালাল নামে একজনকে আটক করা হয়। পরে শাহজালাল হত্যার ঘটনার বিস্তারিত জানায়।
জিজ্ঞাসাবাদে শাহজালাল জানিয়েছেন, ঘটনার দিন বানিপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান রানা ও পাশের গোয়ালমথন গ্রামের নাসির উদ্দিন নিহত রিফাতের পালসার মোটরসাইকেলটি তার কাছে নিয়ে যান। তারা তাকে জানান, রিফাতকে মারধর করে তারা মোটরসাইকেলটি নিয়ে এসেছে। এটি ভারতে বিক্রি করে দিতে হবে।
তিনি আরও জানান, তাদের কথা মতো তিনি মোটরসাইকেলটি ভারতের একজনের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে জানতে পারেন ওই দুজন রিফাতকে মারধর নয়, গলাকেটে হত্যা করেছেন।
শাহজালাল জানিয়েছেন, হত্যায় জড়িত দুজন রিফাতের সঙ্গে চলাফেরা করত। তবে তারা বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন।
পুলিশ পরিদর্শক হিলাল বলেন, ‘এই খুনের পেছনে মোটরসাইকেল ছাড়াও চাঞ্চল্যকর কিছু কারণ রয়েছে। আমরা তদন্তের স্বার্থে সেসব তথ্য এখন প্রকাশ করছি না। তদন্ত শেষে শিগগিরই হত্যার পুরো রহস্য জানানো হবে।’