বাকলিয়া এক্সেস রোডের এলাইনমেন্টের মধ্যে গড়ে ওঠা আলোচিত সেই ১০ তলা ভবনটি না ভেঙে সেটির পাশ দিয়ে সড়ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে না, সাশ্রয় হচ্ছে আনুমানিক ১৪ কোটি টাকা।
সড়কটির নতুন এলাইনমেন্টের ডিজাইন গত ১২ জুলাই সিডিএর প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি ও বোর্ড সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
নগরীর সিরাজদৌলা রোড থেকে পুরাতন বাকলিয়া থানা পর্যন্ত ২২০ কোটি টাকার প্রকল্প বাকলিয়া এক্সেস রোড। নির্মাণাধীন এই সড়কের মাঝে রয়েছে একটি ১০ তলা ভবন, যা প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা।
২০১৯ সালের নভেম্বরে ভবনটি ভাঙার কথা থাকলেও তা পারেনি সিডিএ। ক্ষতিপূরণ বাবদ ভবনমালিককে প্রায় ১৪ কোটি টাকা দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিডিএ।
প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর সিরাজদৌলা রোডে চন্দনপুরা মসজিদের বিপরীত পাশে আয়েশা খাতুন লেন দিয়ে আড়াআড়িভাবে রোডটি চাক্তাই খালের ওপর দিয়ে চলে যাবে। ৬০ ফুট চওড়া এই রোডটি চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পুকুরের কোনা দিয়ে আরও কয়েকটি পুকুরের ওপর দিয়ে মৌসুমী আবাসিক হয়ে মিলিত হবে ডিসি রোডের সঙ্গে।
ডিসি রোড থেকে উত্তর-পশ্চিম কোণে বেঁকে বগার বিল, সৈয়দ শাহ রোড অতিক্রম করে বাকলিয়া থানার পাশ দিয়ে শাহ আমানত সেতুর সংযোগ সড়কের সঙ্গে মিলিত হবে।
কিন্তু বাকলিয়া ডিসি রোডে মৌসুমী আবাসিক এলাকায় সিডিএর অনুমোদন নিয়ে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করেছে হাজী চাঁন্দমিয়া সওদাগর ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্নে ল(অব.) মোহাম্মদ ইকবাল। ইতোমধ্যে ভবনের ৩৭টি ফ্ল্যাট বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রিও করেছেন তিনি।
সড়ক তৈরির সময় এই ভবন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। যার কারণে সড়ক তৈরির কাজ আটকে যায়।
বাবে ইউসুফ নামের ১০ তলা ভবনটি নিয়ে ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর তদন্ত কমিটি গঠন করে সিডিএ। ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও প্রায় এক বছর পর তা জমা দেয়া হয়। সেখানে ভবনটির পশ্চিমে খালি জায়গায় প্রকল্পের এলাইনমেন্ট পরিবর্তনের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়।
অন্যদিকে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চুয়েটের টেকনিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছিল। টেকনিক্যাল টিম ১০ তলা ভবনকে অক্ষত রেখে এর পাশ দিয়ে রোড করার সুপারিশ করে।
বুধবার দুপুরে প্রকল্প পরিচালক কাজী কাদের নেওয়াজ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ তলা ভবন নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে সিডিএ। তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি ও বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হয়।
‘চুয়েটের টেকনিক্যাল টিমের সুপারিশক্রমে ভবনের পাশ দিয়ে সড়কটি নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এতে ভবনমালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে না। সাশ্রয় হচ্ছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা।’
তিনি আরও জানান, ডিপিপি (ডিটেইল প্রজেক্ট প্ল্যান) সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন হলেই নতুন এলাইনমেন্ট অনুযায়ী কাজ শুরু হবে।
সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘সাবেক চেয়ারম্যান আবদুছ ছালামের সময় ভবনের ক্ষতিপূরণ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। তবে ভবনের ক্ষতিপূরণ কেন দিতে হবে তার ব্যাখ্যা চেয়ে মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলে। আমরা একে একে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। ভবন না ভেঙে দুই ভবনের মাঝখান দিয়ে সড়কটি নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। যেখানে চুয়েটের টেকনিক্যাল টিম ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন এলাইনমেন্ট অনুযায়ী ভবনটি ভাঙতে হচ্ছে না। ফলে ভবনটি অক্ষত থাকায় সরকারের ১৪ কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে না। নতুন এলাইনমেন্টটি সম্প্রতি বোর্ড সভায় অনুমোদিত হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এলাইনমেন্টটি শিগগির মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।’