বগুড়ায় করোনা আক্রান্ত মেয়ে জামাইকে দেখে আসার পর উপসর্গ দেখা দেয় শ্বশুর-শাশুড়ির। বাড়িতে এসে দুজনেই অসুস্থ হয়ে পরেন। কয়েকদিন রোগে ভুগে মারা যান শাশুড়ি। কেউ এগিয়ে না আসায় ওই নারীকে গোসল করালেন সোনাতলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন।
উপজেলার জোড়গাছা ইউনিয়নের কুশাহাটা গ্রামে মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
ইউএনও ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা উপসর্গ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিন ধরেই বাড়িতে ছিলেন কুশাহাটা গ্রামের রিনা বেগম। তার অবস্থার অবনতি হলে দুদিন আগে একমাত্র মেয়ে তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেখানে মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে রিনা বেগম মারা যান। তার শরীরে করোনার উপসর্গ থাকলেও নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি।
জোড়গাছা ইউনিয়নের রোস্তম আলী মন্ডল জানান, রিনা বেগমের দুই সন্তান। এক ছেলে প্রবাসে থাকেন। আর মেয়ের বিয়ে হয়েছে বগুড়ার গাবতলী উপজেলায়।
এর মধ্যে রিনা বেগমের মেয়ে জামাই করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন এই দম্পতি। এরপর বাড়িতে এতে তারা দুজনই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, মঙ্গলবার রিনা বেগমের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় রাত পৌনে ১০টার দিকে। এ সময় তাকে গোসল করানোর জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। গ্রামের লোকজন তার দাফনকাজে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। পরে বাধ্য হয়ে ইউএনওকে ফোন দেয়া হলে তিনি ঘটনাস্থলে আসতে রাজি হন।
ঘণ্টাখানেক পরে ইউএনও এসে নিজেই ওই নারীকে গোসল করান। এরপর রাত দুইটার দিকে এলাকার ৩০ থেকে ৪০ জনের উপস্থিতিতে তাকে দাফন করা হয়।
ইউএনও সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে মৃত ওই নারীকে কেউ গোসল করাচ্ছিলেন না। পরে চেয়ারম্যানের ফোন পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে গোসল করাই। এ সময় আমার সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় এক নারী।’
তিনি আরও বলেন, ‘রিনার মেয়ে বার বার দাবি করছিলেন তার মা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। তবে রিনার প্রেসক্রিপশনে করোনা উপসর্গ ও নিউমোনিয়ায় মৃত্যু হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।’
সোনাতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘ওই নারীর স্বামী করোনায় আক্রান্ত। রিনা তার স্বামীর সেবাযত্ন করছিলেন। এর মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি করোনায় মারা গেছেন কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি মারা গেছেন।’
গেল শুক্রবার একই ধরনের ঘটনা ঘটে পিরোজপুরে। করোনা সংক্রমণের ভয়ে রেখা সুলতানা নামে মৃত এক নারীর মরদেহ পড়েছিল কয়েক ঘণ্টা। পরে তাকে গোসল করাতে এগিয়ে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খালেদা খাতুন। তিনি জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে রেখা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার দুপুরে তিনি সেখানে মারা যান।
তার মরদেহ পড়ে থাকার বিষয়টি স্থানীয় এক ইউপি সদস্য তাকে ফোন করে সন্ধ্যায় জানান। পরে রাত ১০টার দিকে তিনি সেখানে যান। তাকে দেখে এগিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবী মাহাফুজা মিলি ও শামীমা আক্তার। তারা মৃত নারীর গোসল করান। পরে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তির সহায়তায় রাত ১২টার দিকে দাফন করা হয় রেখাকে।