পটুয়াখালীতে নির্মাণাধীন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফটকে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের কক্ষ।
কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে রুরাল-নরিনকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (আরএনপিএল) প্রকল্প এলাকায় মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সংঘর্ষে শাহজালাল মিয়া ও হারুন হাওলাদার নামে দুই শ্রমিক আহত হন। নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে আহত হয়েছেন সজীব আহমেদ। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ-চীন যৌথ অংশীদারত্বের এই প্রকল্পের দেশি শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তাদের নিয়মানুযায়ী বেতন-ভাতা না দিয়ে অপরিষ্কার ক্যানটিনে থাকতে বাধ্য করে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে গুনতে হয় মোটা অঙ্কের জরিমানা।
তারা আরও অভিযোগ করেন, প্রকল্প এলাকার ভেতরে কাজ করা দেশি শ্রমিকদের বাইরে যেতে এবং বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দেন চীনের শ্রমিকরা। ভেতরে প্রবেশ করতে না দেয়া এবং এর প্রতিবাদ করায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়ায় কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, মঙ্গলবার সকালে বাইরে থেকে আসা দেশি শ্রমিকরা কাজের জন্য প্রকল্প এলাকায় ঢুকতে চাইলে ফটকের নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে শ্রমিকরা ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন।
তাদের থামাতে গেলে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন আহত হন।
রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিসিএল) নির্বাহী পরিচালক সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে দেশি শ্রমিকদের বের হওয়া এবং বাইরের শ্রমিকদের ভেতরে প্রবেশ করায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। দেশি শ্রমিকরা তা মানতে চাচ্ছেন না।
‘যার কারণে মঙ্গলবার সকালে দেশি শ্রমিকরা বাইরের লোকজনের ইন্ধনে ফটকের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে ভেতরে ঢুকে পড়েন। এ নিয়ে কিছুটা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। এখন তা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’
তিনি জানান, কোম্পানি ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা কীভাবে কাজ করবেন তা আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা হবে।
পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাহফুজুর রহমান জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাভাবিক রয়েছে। শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক চলছে। আশা করা হচ্ছে, বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ-চীন যৌথ অংশীদারত্বের কয়লাভিত্তিক এই প্রকল্পের উৎপাদনক্ষমতা ১৩২০ মেগাওয়াট। এ জন্য উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ চলছে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রকল্প এলাকায় উন্নয়নকাজ চলছে।
বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় চীন ও বাংলাদেশের প্রায় ১ হাজার ৪০০ শ্রমিক কাজ করছেন।