রংপুরের পীরগঞ্জের মিঠিপুর ইউনিয়নে প্রণোদনার অর্থ প্রান্তিক খামারিদের না দিয়ে সচ্ছলদের দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুব্ধ খামারিরা তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাজুল ইসলামও একাধিক অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে জানানো হয়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনার আওতায় এনেছে সরকার। এ কার্যক্রমে প্রান্তিক খামারিদের মধ্যে যাদের ১-৫টি গরু রয়েছে তাদের ১০ হাজার, আর যাদের ছয়টির বেশি গরু রয়েছে তাদের ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়।
পীরগঞ্জ উপজেলায় দুই দফায় এ প্রণোদনা পেয়েছেন ২ হাজার ১০৮ জন খামারি। তাদের মধ্যে ১২ নম্বর মিঠিপুরে দেয়া হয়েছে ১৮২ জনকে। এই ইউনিয়নে প্রণোদনার অর্থ নয়-ছয়ের অভিযোগ করেছেন খামারিরা।
জমিলা বেগম নামে এক খামারি বলেন, ‘হামরা টেকাপয়সা দিবেন পাই নাই জন্যে হামার লিস্টি করে নাই। হামার তিনটা ছৈল, তাদের কিচ্চু নাই। তারা ঢাকাত রিকশা চালায়। যাদের অনেক টাকা আছে, তাদের ঘরোক দিচে।’
গবরা কুতুবপুর গ্রামের রিকশাচালক একরামুল হক বলেন, ‘লকডাউন দিচে, ভুসির দাম বেশি, সবকিছুর দাম বেশি, গরুক খাওয়াতে পারিনে। কিন্তু আমাদের টাকা দেয় নাই। বড়লোকদের যাদের গরু নাই, দুই-একটা গরু তাদেক টাকা দেয়, আমাদের ৫-৭টা গরু আমাদেক দেয় না।’
লালমিয়া নামে এক খামারি জানান, প্রণোদনার টাকা পেলে তাদের অনেক উপকার হতো। তবে পাননি। অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করেও তালিকা করার মানুষ পাননি।
তিনি বলেন, ‘কেউ তো লিস্ট করে নাই। টাকাও দেয় নাই। টাকা যে পাওয়ার জন্য তাকে দেক। যারা পাওয়ার যোগ্য নয় তারা পাইছে।’
সোহরাব আলী নামে এক খামারি অভিযোগ করেন, তার কাছে তিন হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। দিতে না পারায় তাকে প্রণোদনার টাকা দেয়া হয়নি।
মিঠিপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘খামারিদের জন্য যে অনুদান ছিল সেটি সঠিকভাবে বণ্টন হয়নি। গরিব মানুষ, ভ্যান চালায়, রাস্তার ওপরে কাঁচাবাজার করে সংসার চালায় এমন খামারিদের প্রণোদনা দেয়া হয়নি। তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
‘বরং যারা সচ্ছল, অর্থের কোনো অভাব নেই, পাকা বাড়ি আছে, ২০-৩০ বিঘা জমি আছে, ভাটার মালিক, চাকরি করে এমন ব্যক্তিদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।’
এই নেতার অভিযোগ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে তোজাম্মেল হক নামে এক ব্যক্তিকে এই তালিকার দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তিনি প্রান্তিক খামারিদের নাম দেননি।
তোজাম্মেল হক অবশ্য বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। আমি সঠিকভাবেই তালিকা দিয়েছি।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছেও অসংখ্য মৌখিক অভিযোগ এসেছে। আমি সশরীরে গিয়েছি তদন্ত করতে, কিন্তু কেউ সাক্ষ্য দেয় না। তবুও আমি এই অনিয়ম বের করার চেষ্টা করছি। সত্যতা মিললে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সামছুল আলম জানান, সরকার যে প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে, তা প্রান্তিক চাষিদের জন্য। প্রণোদনার জন্য খামারি নির্বাচনে কোনো ধরনের ভুল বা অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।