খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ৯টি উপজেলায় বর্ষা মানেই মাছ ধরার উৎসব।
বৃষ্টি নামলে পানিতে স্রোত আসে, বৃষ্টির ফোঁটায় মাছদের উন্মাদনা বাড়ে, টানে টানে জালে ধরা পড়ে মাছের ঝাঁক। এটি খাগড়াছড়ির চেংগী নদী, দীঘিনালা মাইনী নদী, কাচলং নদী, মানিকছড়ি উপজেলার তিনটহরী ইউনিয়নের মধ্যম পাড়ার নদী/হালদা খাল বাস্তব চিত্র।
বর্ষা এলেই গ্রামজুড়ে যেন উৎসব লাগে। ছেলে-বুড়ো সবাই সে উৎসবে মেতে ওঠে। এ উৎসবে নেই আনুষ্ঠানিকতা, বৃষ্টি এল তো নানা ধরনের জাল নিয়ে নদী, খাল-বিলে নেমে পড়ে আবালবৃদ্ধবনিতা। বর্ষায় নদী, খাল-বিলে থইথই করা পানিতে দেশি মাছ শিকার করে তারা।
অবশ্য এখন নদী-নালা, খাল-বিলে পানি থাকলেও মাছ একদমই কমে গেছে। লাগামহীন তামাক চাষে ও পরিবেশ দূষণের প্রভাব পড়েছে মানিকছড়ি হালদা খাল-বিলের ঐতিহ্যবাহী মাছের ওপর।
এ দেশের গ্রামগঞ্জে মাছ ধরার অনানুষ্ঠানিক উৎসবের দেখা মেলে বর্ষায় নতুন পানি এলে। ‘টানের মাছ’ শব্দটি স্থানীয়ভাবে একটি বিশেষ ধরনের জালে মাছ ধরাকে বোঝায়। স্থানীয় ভাষায় একে ধর্মজাল বলা হয়। এটি পানিতে পেতে রেখে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পানি থেকে টেনে তুলে মাছ ধরা হয় বলে একে স্থানীয় ব্যক্তিরা টানের মাছ বলেই ডাকেন।
বর্ষার মধ্যভাগ চলছে। মধ্যম পাড়া গ্রামের মধ্যে দিয়েই এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে হালদা খালটি। বর্ষা এলে এখানে পানি বাড়ে। আর তাতেই মেলে শিং, কই, মাগুর, ছোট বাইম, গুইত্তা (গুথুম), শোল, ট্যাংরা, কাকিলা (কাইক্কা), ভেদার, খইলা (খলসে), পুঁটি, টাকি, মলা, চিংড়িসহ বিভিন্ন দেশি মাছ। গত কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে অনেকটাই পানি বাড়েছে। আর এই পানিতেই বিভিন্ন ধরনের জাল ফেলে মাছ ধরা হচ্ছে।
ষাটোর্ধ্ব দেলোয়ার হোসেন ও চিংপ্রু চৌধুরী ধর্মজাল ফেলেছেন। তিনি জানান, এখানে আগে ম্যালাই মাছ পাওয়া যেত। এখন আর তেমন নাই।
তবে এমন চিরায়ত উৎসব খুব বেশি দিন টিকবে না এই হালদা খালে। খালে পরিবেশ দূষণে পানিতে মাছ বাড়ছে না। অনেক মাছের জাত ইতিমধ্যেই গ্রামের জলাশয় থেকে বিদায় নিয়েছে। বিশেষ করে মলা মাছ একদম দেখাই যায় না।