জাদু করে টাকা বানানো যায়। সে কৌশল শেখানোর কথা বলে হাত-পা বেঁধে পানিতে চুবিয়ে জোড়া খুন। পাওনা টাকার জেরে গাজীপুরে এমন হত্যাকাণ্ডের সাত দিন পর মূল হোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা হলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার কিসমত দুর্গাপুর মধ্যপাড়া এলাকার রাসেল প্রধান ও বগুড়ার ধুনট থানার শৈলমারী গ্রামের মো. সৈকত সরকার।
নিহত মাহমুদুল হাসান রংপুরের মিঠাপুর উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং মো. রাকিব হোসেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সাতনাই কলোনি এলাকার। তারা দুজনেই গাজীপুরের কোনাবাড়ী আমবাগ শাহানা বেকারির কর্মচারী ছিলেন।
রোবাবর দুপুরে জিএমপি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জিএমপির উপকমিশনার জাকির হাসান।
তিনি জানান, গত ৭ জুলাই গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিয়ার চর পরিত্যক্ত ইটভাটার পাশে বিলের পানিতে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাতপরিচয়ের দুই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে কোনাবাড়ী থানার পুলিশ। এ ঘটনায় এসআই তাপস কুমার উজা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন।
পরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রযুক্তি ও ম্যানুয়েল ইন্টেলিজেন্সের সহায়তায় কোনাবাড়ী, কালিয়াকৈর, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন আসামি সৈকত সরকারকে গত শনিবার কালিয়াকৈর থেকে আটক করে।
সৈকতকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা রাসেল প্রধানকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল প্রধান জানান, নিহত মাহমুদুল হাসান ও রাকিব হোসেনের সঙ্গে কোনাবাড়ীর বাঘিয়া এলাকায় শাহানা বেকারিতে কাজ করতেন তিনি। মাহমুদুল এক মাস আগে তার কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা ধার নেন। ধারের টাকা চাইতে গেলে মাহমুদুল টাকা না দিয়ে নানা টালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে মাহমুদুল তার মোবাইল নম্বরটি ব্লক করে রাখেন।
গত ১ জুলাই রাসেল প্রধান গাইবান্ধা থেকে কোনাবাড়ীতে এসে পাওনা টাকার জন্য মাহমুদুলকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে তাকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে সহকর্মী রাকিবের সহায়তায় মাহমুদুলের সন্ধান পান।
তারা তিনজন একত্র হয়ে ৩ জুলাই সন্ধ্যায় মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার বাঘিয়ার চরে আবুল কালাম আজাদের পরিত্যক্ত ইটভাটার পাশে বিলের কাছে গিয়ে আড্ডা দিতে থাকেন।
একপর্যায়ে রাসেল কৌশলে জাদুর মাধ্যমে টাকা পাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে রশি দিয়ে মাহমুদুলের দুই পা ও হাত বেঁধে ফেলেন। পরে মাহমুদুলকে টেনেহিঁচড়ে বিলের পানিতে নিয়ে চুবিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এ ঘটনা রাকিব তার কারখানার মালিককে বলে দেবেন বলে চিৎকার করলে পাশে থাকা সিমেন্টের তৈরি সীমানা পিলার দিয়ে মাথায়, বুকে ও পিঠে আঘাত করে রাকিবকে হত্যা করেন।
পরে দুজনের মরদেহের ওপর ঘাস ও লতাপাতা দিয়ে পানিতে ফেলে গাইবান্ধায় পালিয়ে যান রাসেল।
উপকমিশনার জাকির হাসান আরও বলেন, মাহমুদুল হাসানের একটি মোবাইল ফোন রাসেল প্রধান কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকায় হোটেল কর্মচারী মো. সৈকত সরকারের কাছে বিক্রি করেন।
পুলিশ ওই মোবাইলের সূত্র ধরে ১০ জুলাই রাতে মো. সৈকত সরকারকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গাইবান্ধা থেকে রাসেল প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়।