করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের শুরু থেকেই ময়মনসিংহে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন হলেও গত কয়েকদিন যাবত প্রশাসনের ঢিলেঢালা অবস্থান দেখা গেছে।
শনিবার বিকেল ৪টা থেকে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে সব সড়কে যানবাহন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে তিন চাকার যানের কমতি নেই কোথাও।
নগরীর শম্ভুগঞ্জ এলাকা, পাটগুদাম ব্রিজ মোড়, চরপাড়া এলাকা, গাঙ্গিনাড়পাড়, টাউনহলসহ সব সড়কেই ইচ্ছে মতো চলছে যানবাহন। সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রাইভেটকার। কেউ কেউ আবার পার্কের আশপাশে ভিড় জমিয়ে দিচ্ছেন আড্ডা।
চরপাড়া মোড়ে অটোরিকশা থেকে যাত্রী নামিয়ে আবার যাত্রী তুলতে ডাকাডাকি করছেন ফয়সাল নামে এক চালক। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি জানান, ‘অভাব অনটনের সংসার। তবুও এতদিন বাড়ি থেকে বের হইনি। জমানো টাকা সব শেষ। গত পরশুদিন অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছিলাম। পাটগ্রাম ব্রিজের কাছাকাছি এসে দেখি ম্যাজিস্ট্রেট। ভয়ে তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছি। কিন্তু এখন মামলা হোক, জরিমানা দেয়া লাগুক, উপায় নেই। কারণ খুধার জ্বালা আগে মিটাতে হবে।’
পাশেই সিএনজি নিয়ে অপেক্ষা করছেন হুমায়ুন। তিনি জানান, ‘আজকে বিধিনিষেধ আছে সেটা মনেই হয়নি। যাত্রী নিয়ে খুশী মতো গাড়ি চালাচ্ছি। তবে যেখানে পুলিশ দেখছি আগেই সতর্ক হয়ে বিভিন্ন অযুহাত দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি৷’ আরও ঢিলেঢালা বিধিনিষেধ থাকার দাবি জানান তিনি।
পাটগ্রাম ব্রিজ মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক আব্দুল হালিম নামে এক বৃদ্ধের সঙ্গে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরারে ম্যাজিস্ট্রেট কহনো কিছু জিগাইছে না। এর লাইগ্যা আরামছে গাড়ি চালাইছি। প্রথম থাইক্যা পেসেঞ্জার ভাড়াও বেশি দিছে। কয়েকদিন ধইরা ডাহাডাহি কইরাও যাত্রী পাই না। বাস ছাড়া সব গাড়ি রাস্তায় চলতাছে।’
পাশেই অটোরিকশাতে উঠে বসে ছিলেন জয়নাল নামে এক যুবক। তিনি বলেন, ‘গৌরীপুর থেকে দুপুরে মাসকান্দা এলাকায় গিয়েছিলাম বোনের বাড়িতে ঈদের দাওয়াত দেয়ার জন্য।’
‘অটোরিকশা দিয়ে যাওয়ার পথে প্রত্যাকটি সড়কে দেখেছি বাস ছাড়া তিনচাকার যানবাহনের ভিড়। আমি নিজেও এতদিন কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলেছি। এখন সবাই বিভিন্ন কাজকর্মে বের হয়েছে, তাই আমিও আজ প্রথম বের হয়েছি। কোথাও ভ্রাম্যমাণ আদালত গাড়ি আটকায়নি। যানবাহন পাওয়া না গেলে আমরা এমনিতেই কম বের হবো।’
জমে উঠেছে গরুর হাট। ছবি: নিউজবাংলা
শুধু শহর ছাড়াও ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারে মানুষের উপচে পড়া ভিড় জমেছে। এ ছাড়া জেলার গৌরীপুর উপজেলায় শনিবার গরুর হাট বসতে দেখা গেছে। গরু কিনতে ক্রেতা বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছ৷ এর মধ্যে ৬ জন করোনা শনাক্ত হয়ে এবং বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪২৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জেলায় আক্রান্তের হার ৩৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।