পাবনার চলনবিল, গাজনার বিল, পদ্মা ও যমুনা নদীর চরসহ জেলার অধিকাংশ এলাকায় কোরবানি উপলক্ষে পশু লালন-পালন করেন খামারিরা। এ বছর জেলায় তিন লাখের বেশি পশু মোটাতাজা করা হয়েছে।
জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা দুই লাখের কাছাকাছি। এবার জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় লক্ষাধিক পশু বিক্রির আশা ছিল খামারিদের। তবে লকডাউনের কারণে ব্যাপারী না আসায় এবং কোরবানির হাটে দাম কম থাকায় পশু বিক্রি নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা।
খামারি ও পশু ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা জানান, করোনা মহামারিতে কঠোর লকডাউনের মধ্যেই পাবনা সদরের হাজির হাট, ঈশ্বরদী অরণকোলা হাট, তারাবাড়িয়া হাট, আতাইকুলার পুষ্পপাড়া হাট, দাশুড়িয়া হাট, সাঁথিয়ার ধুলাউড়ি হাট, বেড়ার সিঅ্যান্ডবি চতুরহাট, নাকালিয়া, নগরবাড়ি হাট, সুজানগর হাট, চাটমোহরের হাটগুলোতে কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে।
তবে একাধিক হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা বেশ কম। ক্রেতাও তেমন নেই। এতে পশুর দাম যেমন বাড়ছে না, বিক্রিও হচ্ছে কম।
ঈশ্বরদীর অরণকোলা মুনতাহার ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী বাচ্চু ইসলাম জানান, তার খামারে ৮০টি গরু আছে। এর মধ্যে ১২টি গরু বিক্রির জন্য পালন করেছেন। প্রতিটি গরুর জন্য তার ব্যয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। বাজার জমলে গরুগুলো ৯০ থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।
পাবনায় অন্য জেলা থেকে ব্যাপারী না যাওয়ায় পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক খামারি
অরণকোলা পশুহাটের ইজারা কমিটির পরিচালক মিজানুর রহমান রুনু মণ্ডল বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে স্থানীয়ভাবে তারা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী হাটে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন। হাট কমিটির পক্ষ থেকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ঈশ্বরদীতে কোরবানি পশুর সংকট হবে না।
পাবনা সদরের সবচেয়ে বড় হাজির হাটে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি মানতে সার্বক্ষণিক মাইকিং হচ্ছে। খামারিরা পশু নিয়ে হাটে আসছেন। তবে হাটে পশু, ব্যাপারী ও ক্রেতা তুলনামূলক কম।
সেলিম নামে হাট কর্তৃপক্ষের একজন জানান, এবার তুলনামূলক পশুর দাম কম। অনেককে পশু ফেরত নিয়ে যেতে দেখেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০-২৫ ভাগ পশু বিক্রি হবে না।
বেড়ার সিঅ্যান্ডবি চতুরহাটে দেখা যায়, নছিমন, করিমন বন্ধ থাকায় দূরদূরান্ত থেকে হেঁটে গরু নিয়ে হাটে আসছেন অনেকে। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার কোনো ব্যাপারী বা পাইকার আসছেন না। হাটে গবাদিপশুও কম।
চাটমোহরের আবুল কাশেম জানান, প্রায় দেড় বছর ধরে চারটি গরু পালছেন কোরবানিতে বিক্রি করে একটা কিছু করবেন বলে। করোনার কারণে হাটে ক্রেতা কম, ব্যাপারীও নেই। এ জন্য গরুর দাম কম। দেড় বছর ধরে যে স্বপ্ন দেখছিলেন, গরুর দাম কম হওয়ায় তা হয়তো পূরণ হবে না তার।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আল-মামুন হোসেন মণ্ডল জানান, পাবনায় তিন লাখের বেশি গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়া কোরবানি উপলক্ষে লালন-পালন করা হয়েছে। জেলায় কোরবানির জন্য ২ লাখের মতো পশুর প্রয়োজন হয়। বাকি ১ লাখ পশু জেলার বাইরে বিক্রি করতে হবে।
তিনি আরও জানান, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জেলায় প্রায় ২১ হাজার খামারি রয়েছেন। এ ছাড়া জেলায় অন্তত ১০ হাজার খামারি ক্ষুদ্র পরিসরে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন।
এদিকে হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনার জন্য হাট কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।