দেশে চলমান শাটডাউনে হাটের পরিবর্তে সাতক্ষীরায় অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। বেশ সাড়াও ফেলেছে এ উদ্যোগ। এরই মধ্যে ৬০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।
তবে খামারি ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে সবার সক্ষমতা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন অনেকে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিক্রেতারা তাদের পশুর ছবি, ভিডিও, বর্ণনা, দাম ও মালিকের ঠিকানা নির্ধারিত ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে আপলোড করতে পারবেন। অনলাইনে হওয়ায় সাতক্ষীরাসহ দেশের যেকোনো জায়গা থেকে পশু অর্ডার করতে পারবেন ক্রেতারা।
এতে প্রচলিত পশুর হাটে না যেতে হওয়ায় মানুষ একদিকে যেমন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে, তেমনি কোরবানির পশু জেলার বাইরে বিক্রির সুযোগও তৈরি হবে।
নির্ধারিত ওয়েবসাইটে কেউ কেউ পশুর তথ্য দিতে পারলেও আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান নেই অনেক খামারি ও ব্যবসায়ীর। আবার সবার কাছে নেই স্মার্টফোন। এ কারণে পশুর ছবি ও ভিডিও আপলোড করা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন অনেকে।
জেলার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার বিনেরপোতা এলাকার গরু ব্যবসায়ী জিয়ারুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার একটি বাটন সেট রয়েছে। কীভাবে ছবি তুলতে হয় বা কোথায় ছবি দিতে হয়, সেটা আমি বুঝি না। সারা বছর কোরবানির হাটের দিকে চেয়ে থাকি। কিন্তু এ বছর পশুর হাট না বসায় খুবই বিপাকে আছি।’
লকডাউনের কারণে পশু বেচাকেনা তেমন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ খামারি। সারা বছর পশু লালন-পালন করে কোরবানির ঈদে বিক্রি ভালো না হলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
সদর উপজেলার ধুলিহর এলাকার খামারি আবদুল জব্বার বলেন, ‘আমার খামারে ১০টি গরু আছে। প্রতিটির দাম দেড় থেকে তিন লাখ টাকা। গো-খাদ্যের দাম বেশি। সারা বছর গরুগুলোর পেছনে ব্যাপক টাকা খরচ হয়েছে।
‘আশায় আছি কোরবানির ঈদের। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র একটি গরু বিক্রি হয়েছে। তাও বেশ কম দামে। কোরবানিতে গরুগুলো বিক্রি না হলে নিঃস্ব হয়ে যাব।’
খুলনা বিভাগের পারুলিয়া গরুহাটের ইজারাদার আল ফেরদৌস আলফা বলেন, ‘দেশব্যাপী শাটডাউনের কারণে পশুর হাট বন্ধ রয়েছে। প্রান্তিক কৃষক বা খামারিরা গরু পালন করে ঈদের হাটে বিক্রি করেন কিছুটা লাভের আশায়। কিন্তু করোনার কারণে প্রশাসন হাট বন্ধ করে রাখায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মাত্র কয়েক দিনে ৬০ লাখ টাকারও বেশি পশু বিক্রি হয়েছে অনলাইনে। প্রচুর সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। করোনার সংক্রমণ রোধে যেহেতু পশুর হাট বন্ধ রয়েছে, তাই অনলাইন বা ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে পশু বেচাকেনা ছাড়া বিকল্প নেই।’
খামারি ও ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের কিছু সমস্যা রয়েছে। অনলাইনে পশু বিক্রয়ের বিষয়টি যেহেতু এবার নতুন, তাই কিছুটা সমস্যা হবে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। পশুর ছবি আপলোড করতে উপজেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ অফিস সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে দিচ্ছি। পশু ক্রেতারা পোস্ট করা ছবি দেখে মালিকের সঙ্গে সরাসরি দরদাম করে কিনতে পারবেন।’
জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জেলায় কোনো প্রকার গরুর হাট বসবে না। যদি জনপ্রতিনিধি, বাজার কর্তৃপক্ষ, হাট ইজারাদারসহ যেকোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা হাট বসানোর চেষ্টা করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, “জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ‘সাতক্ষীরা হাট’ নামে অনলাইন হাটে পশু ক্রয় বিক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খামারি ও ব্যবসায়ীরা অনলাইনের মাধ্যমে গরু বিক্রয়ের নিবন্ধন করতে পারবেন এই প্ল্যাটফর্মে। তাই আতঙ্কের কারণ নেই।
‘হাট বন্ধ থাকলেও অনলাইনে এবার পশুর কেনাবেচার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে খামারিদের বাড়তি খরচ কমবে। অনলাইনে পশু কিনতে বিভিন্ন ফেসবুক পেজে বিভিন্ন দামের পশুর বিবরণ দেয়া আছে। পছন্দ মতো পশু কেনাবেচা করা যাবে।”