সবজি ব্যবসায়ী শাহজাহান মিয়া। শখ ছিল একটা সুন্দর ষাঁড় পালবেন। তার একটা নাম রেখে সন্তানের মতো যত্নে বড় করবেন। শখ মিটিয়েছেন শাহজাহান। বাড়িতে একেবারে যত্নে বড় করেছেন একটি ষাঁড়। নাম রেখেছেন ‘কালো পাহাড়’।
মিশমিশে কালো রঙের ষাঁড়টির ওজন এখন ৩৫ মণ। উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, লম্বা ৮ ফুটের বেশি।
ঈদুল আজহা সামনে রেখে প্রতিদিনই গরুটিকে দেখতে শাহজাহানের বাড়িতে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ।
গত বছর গরুটি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন শাহজাহান। ৫ লাখ টাকা দাম উঠলেও বন্যার পানির কারণে বিক্রি হয়নি গরুটি।
চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কোরবানির হাট বসবে না, এমন শঙ্কা রয়েছে শাহজাহানের। বিক্রি করতে না পারলে হয়তো খুব লোকসান গুনতে হবে তাকে। কারণ, চার বছর বয়সী কালো পাহাড়ের এখন দৈনিক ৬০০ টাকার বেশি খাবার লাগছে।
ঢাকার ধামরাই উপজেলার বাইশাকান্দা ইউনিয়নের খাগাইল গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া। সবজি ব্যবসায়ী শাহজাহান ও তার স্ত্রী-সন্তান চার বছর ধরেই গরুটিকে লালন-পালন করে আসছেন।
খাগাইল উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, ‘আমি আসছি গরুটা অনেক বড় তাই দেখতে। শুনি যে, গরুটা অনেক দেহার মতো। কিন্তু আমি এত দিন দেখি নাই এই প্রথম দেখলাম। নাম কালো পাহাড়। আইসা দেখলাম, মাইনসা যা কইছে তার থাইকা গরুটা অনেক বড়। আমার মনে হয়, গরুটা ৩৫-৪০ মণ ওজন হইব। এ রকম গরু মনে হয় পুরা ধামরাই থানায় নাই।’
কুশুরা ইউনিয়ন থেকে আট কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গরুটি দেখতে এসেছেন ওয়াসিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় আট কিলোমিটার দূরে থাইকা বিশাল কালো পাহাড় নামে গরুটা দেখতে আসছি। গরুটা দেখতে অনেক বিশাল। কালো পাহাড় যে নামটা রাখছে, দেখতে আসলে ওই রকমই। একজন মানুষের যে উচ্চতা তার চেয়ে বেশি এটার উচ্চতা। অনেক মানুষ আসতাছে এটারে দেখতে। আমরাও শখ আছে এ রকম একটা গরু পালার।’
কালো পাহাড়ের মালিক শাহজাহান মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই কুরবানি ঈদ আইলে এটার চার বছর বয়স হইব। বাইত্তে নিজের গাভিত থাইকাই এটা হইছিল। জন্মের সমে ওইটা খুব সুন্দর অইছিল।
‘ওইসুম কইছি ওইটা অনেক দিন পালুম। আমার বাইত্তে ওই রকম গরু আছিল না। সুন্দর একটা গরু আছিল না দেইখাই ওইটা শখ কইরা পালছি। পাইলা ওইটার শখ দৌড়ামু। মাইনসে দেকপার আইব। হাউস নাগব অনেক। দিনে এমুনও আছে একশ-দুইশ মানুষ আহে সিরিয়াল ধইরা গরু দেখবার লাইগা।
‘গত বছর গরুটা ৫ লাখ টাকা দাম আইছিল। পরে কিছু কমে আমি দিয়া দিছিলাম। পানির কারণে আইয়্যা গরুটা নিবার পারল না। আমার আশা তো শ্যাষ। এহন তো গরুটা বেচন লাগব। মোটামুটি আমার আশা ১২ লাখ ট্যাকা হলে গরুটা বেচমু।’
চার বছর বয়সী কালো পাহাড়কে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার গোসলও করাতে হয়। ছবি: নিউজবাংলাএখনও প্রকৃত খদ্দের আসেনি জানিয়ে শাহজাহান বলেন, ‘এ বছর ওই রকম পাটি জোর দিয়া আহে নাই। কইয়্যা যায় ৫-৬ লাখ ট্যাকা বেচবেন কি না? কিন্তু পুরাভাবে যে পাটি আহে, সেই রকম অহন তরি আহে নাই। দেখতাছে, নম্বর-টম্বর নিয়া যায়। কয়, আহুম।
‘এক বছর ধইরা প্রতিদিন ৬০০ ট্যাকার খাওন লাগে। গমের ভুসি, ছোলা, বুট, ঘাস বিভিন্ন ফল-ফলান্তি মিইলা ৬০০ ট্যাকার খাওন লাগে। মাইনসের কাছে হুনি, ট্যাবলেট খাওয়ায়, ইনজেকশন দিয়া মোটাতাজা করা যায়। হেইটা আমি খাওয়াই নাই। যদি অসুখ হয়, তাইলে এমনে ওষুধ খাওয়াই।’
শাহজাহান বলেন, ‘সকাল বেলা ওটারে গোসল না করাইলে খাইব না। ঘুমেত থাইকা ওঠাই ওইটারে গোসল করান নাগে আগে। গোসল করামু তারপর গিয়া খাইব। আবারও দিনের বেলা গরুম নাগলে আবার গোসল করান নাগব। এই রকম কইরা দিনে ২-৩ বার গোসল করাই।’