বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘মোর বুকখান খালি হই গেইল’

  •    
  • ১০ জুলাই, ২০২১ ১৪:৪৪

কারখানায় আগুন ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কে তিন তলা থেকে লাফ দেন মোরসালিন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারা যান তিনি।

‘ঘটনার দিন বিকালত মোক মোর শালা জুয়েল ফোন করি ঘটনা জানায়। ছেলে খান তিন তলার ছাদোত থাকি লাফ দিছে। রাইত ছেলে খান মইরে গেইল। মোর বুকখান খালি হই গেইল।’

বিলাপ করে এভাবেই আহাজারি করছেন সদ্য সন্তানহারা এক বাবা। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাশেম ফুড লিমিটেড কারখানায় আগুনে সবশেষ ৫২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। সেই মৃত্যুর তালিকায় নাম রয়েছে মোরসালিনেরও।

কারখানায় আগুন ছড়িয়ে পরলে আতঙ্কে তিন তলা থেকে লাফ দেন তিনি। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারা যান মোরসালিন।

২২ বছর বয়সী মোরসালিন ইসলাম দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সুকদেবপুর গ্রামের ছেলে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়।

ট্রাক্টরের (ট্রলি) হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করতেন মোরসালিন। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনার খবরে শঙ্কিত বাবা মা হেলপারের চাকরি ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। তাই কারখানায় শ্রমিকের চাকরি নিয়ে মামা জুয়েলের সঙ্গে পাড়ি জমান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে গিয়ে আজ সে নিজেই না ফেরার দেশে।

মোরসালিনের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। দুর্ঘটনার পর থেকেই মা মোকসেদা খাতুন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। শোকে কাতর বাবাও। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।

মোরসালিনের মৃত্যুতে দিনাজপুরে তার বাড়িতে প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছবি: নিউজবাংলা

এদিকে দুর্ঘটনার দুইদিন পার হয়ে গেলেও সন্তানের মরদেহ এখন পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারেননি বাবা-মা।

বিলাপ করে মা মোকসেদা খাতুন বলেন, ‘ঘটনার তিন দিন আগত মোক বাজান ফোন দিছিল। মোক কইছে, মা মুই বইনের জন্যি সেমাই-চিনি কিনিছু। মুই ঈদত বাড়ি গেইলে বইনের শ্বশুরবাড়িত যাই সেমাই-চিনি দিতে আসিম। তুই চিন্তা করিস না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোর বাজান আগত ট্রলিত কাজ করছিল। সারা দেশত যেই ভাবে এক্সিডেন্ট হইচ্ছে, মুই খুব ভয়ে থাকি। মুই বাজানক কইছু, বাজান তুই ট্রলিত কাজ ছাড়ি দে। বাজান মোর কথা শুনিয়া কারখানায় কাজ করবের যায়। কিন্তু বাজান মোর কাছত আরও নাই। বাজান মোক ছাড়ি চলি গেছে।’

শোকে পাথর বাবা আনিসুর রহমান জানান, ঘটনার আগের দিন মোরসালিন তার মোবাইলে সাড়ে চার হাজার টাকা পাঠিয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘টেহা পাঠাই মোক ফোন দিক বাজান কইছে, বাবা বইনের বিয়ার সময় মুই বইনটারে কিছুই দিবার পারু নাই। তোমার মোবাইলত মুই সাড়ে চার হাজার টেহা পাঠাইনু। ওই টেহা দিয়া বইনের জন্যি কাপড় কিনি দিস। এটাই বাজানের সাথত মোর শেষ কথা।’

এ বিভাগের আরো খবর