বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘জীবনের ভয়ে সরকারের দেয়া বাড়িতে উঠতে পারিনি’

  •    
  • ৯ জুলাই, ২০২১ ২০:১১

শুধু বর্ষার বৃষ্টিতে ঘর ভেঙে পড়া নয়, দেয়া হয়নি বিদ্যুৎ-সংযোগও। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির সংকটও রয়েছে। পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২২টি পরিবারের জন্য চালু আছে মাত্র একটি হস্তচালিত নলকূপ। প্রকল্পের বাকি ১৫টি ঘর ঠিক থাকলেও এসব ঘরে কেউই থাকছেন না ধসে পড়ার আশঙ্কায়।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্যোগ-সহনীয় ঘর বসবাস শুরুর আগেই ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। একই সঙ্গে নন্দীগ্রাম উপজেলার কিছু ঘরে দেখা দিয়েছে ফাটল।

বর্ষা মৌসুমে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে ভূমিহীনদের দেয়া এসব বাড়ির এক পাশের মাটি খালে ধসে গেছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ঘরে বড় কোনো সমস্যা হয়নি। মেরামত করলেই বসবাসের উপযোগী হবে।

বাড়ি পাওয়া ব্যক্তিদের অভিযোগ, প্রতিটি ঘরের সঙ্গে টয়লেট দেয়ার কথা থাকলেও ২২ ঘর মিলে দেয়া হয়েছে তিনটি। আর ঘরগুলো ভেঙে পড়ার ভয়ে তারা সেখানে বসবাস করছেন না।

শেরপুর উপজেলায় তড়িঘড়ি করে খালের কিনারায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২২টি ঘর নির্মাণ করা হয়। খালের মাটি কেটে বাড়ির চারপাশে দেয়া হয়। এ কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি খালে ধসে যাওয়ায় ঘরগুলোর এই হাল হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২-এর আওতায় অতিদরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য সরকারিভাবে আধা পাকা বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে মোতাবেক শেরপুর উপজেলায় ২ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

পরে দুই শতক করে খাসজমি বন্দোবস্ত দিয়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে অতিদরিদ্র ১৬৩টি ভূমিহীন পরিবারকে একটি করে আধা পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়। দুই কক্ষ, রান্নাঘর, টয়লেটসহ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

এর ধারাবাহিকতায় উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের খানপুর কয়েরখালি বুড়িগাড়ি এলাকায় খালের কিনারায় ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। পরে সুফলভোগীদের হাতে এসব বাড়ির জমির দলিল ও বাড়ি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু এসব নতুন বাড়িতে ওঠার আগেই ঘটছে নানা বিপত্তি। বর্ষা মৌসুমের টানা দুই দিনের বৃষ্টিতেই দুর্যোগ-সহনীয় সাতটি ঘর ভেঙে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী হায়দার আলী, আব্দুল কাদের, ছালমা বেগম, শেফালী বেগম, নদীয়ার চাঁদ, মোকছেদ আলী, সোনা উদ্দিন ও গোলাপী বেগমের বাড়ির পেছনে টয়লেট ও মাটি খালে ধসে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে দেয়ালও। খালটিতে বাঁশের পাইলিং করে প্রকল্পের বাড়িগুলো রক্ষার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তবে শেষরক্ষা হয়নি।

ছাবেদ আলী বলেন, ‘আমরা জীবনের ভয়ে সরকারের দেয়া বাড়িতে উঠতে পারিনি। যেকোনো সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাকি ঘরগুলোও ভেঙে পড়তে পারে।’

শুধু বর্ষার বৃষ্টিতে ঘর ভেঙে পড়া নয়, দেয়া হয়নি এখনও বিদ্যুৎ-সংযোগ। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির সংকটও রয়েছে। পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২২টি পরিবারের জন্য মাত্র একটি হস্তচালিত নলকূপ চালু রয়েছে। প্রকল্পের বাকি ১৫টি ঘর ঠিক থাকলেও এসব ঘরে কেউই থাকছেন না ধসে পড়ার আশঙ্কায়।

আরেক সুবিধাভোগী ছালমা বেগম বলেন, ‘বসবাস শুরুর আগেই বাড়ির একটি ঘর ছাড়া সবই ভেঙে পড়েছে। বাকি ঘরটির দেয়ালে ফাটল ধরেছে। মেঝের প্লাস্টার উঠে যাচ্ছে। এটিও যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।’

খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘরগুলো রক্ষায় খালের ধারে বাঁশের পাইলিং দেয়া হয়েছে। ভেঙে পড়া কয়েকটি টয়লেট ও রান্নাঘর পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ময়নুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘর তো ভেঙে যায়নি। এ কারণে নতুন করে নির্মাণ করা লাগবে না। ঘরের কাছ থেকে মাটি সরে গিয়েছিল। সেগুলো পূরণ করা হচ্ছে। আর ঘরে যে আপাতত সমস্যা হয়েছে, সেগুলো সংস্কার করা হলে বসবাসের উপযোগী হবে।’

নন্দীগ্রাম উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের কয়েকটি ঘরেও দেয়ালে, মেঝে ও পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে আশ্রয় নেয়া সুবিধাভোগী নিম্নবিত্ত মানুষগুলো আছেন আতঙ্কে। সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করায় এমন হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর অধীনে নন্দীগ্রাম উপজেলায় ১৫৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ঘর পায়। প্রতিটি ঘর নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। উপজেলার গোছন ও গোপালপুর পুকুরপাড়ের কয়েকটি ঘরে দেয়াল, মেঝে ও বারান্দার পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে।

নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিফা নুসরাত বলেন, ‘আমাদের এখানে দুয়েকটা ঘরে হালকা ফাটল দেখা দিয়েছে। সেগুলো আমরা মেরামত করে দিচ্ছি। এটা মেজর কোনো সমস্যা হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর