বাবা-মা চেয়েছিলেন ছেলে চিকিৎসক হবে। বহু সাধনায় বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন সন্তান। কিন্তু এই পেশাই কি না কাল হলো তার?
দায়িত্ব ছিল করোনা ওয়ার্ডে। কিন্তু কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা না থাকায় বাসা থেকে চলত হাসপাতালে আসা-যাওয়া। একপর্যায়ে বয়োবৃদ্ধ বাবা-মায়ের দেহে শনাক্ত হয় করোনা।
শত চেষ্টা করেও তাদের আর বাঁচানো যায়নি। তাই চিকিৎসক ছেলের আক্ষেপ, ‘আজ যদি ডাক্তার না হতাম, তাহলে হয়তো করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিতে হতো না। আর করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা না দিলে আমার মা-বাবাও করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যেতেন না।’
এই গল্প কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মো. জাকি উদ্দিনের।
জাকি জানান, ছয় মাস আগে তিনি, তার ছোট বোন ও বাবা-মা করোনায় আক্রান্ত হন। অবস্থা খারাপ হওয়ায় চারজন ভর্তি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যালে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে মারা যান স্কুলশিক্ষক মা জাহানারা নাসরিন।
কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন ৬৬ বছর বয়সী পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবা সালাউদ্দিন। কিন্তু ধকল কাটতে না-কাটতেই ৭ জুলাই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে কুমিল্লার একটি হাসপাতালে মারা যান।
বৃহস্পতিবার বাদ জোহর জানাজা শেষে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের গ্রামের বাড়িতে সালাউদ্দিনকে দাফন করা হয়।
করোনায় মা-বাবাকে হারিয়ে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ডা. জাকি উদ্দিন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘কোভিড রোস্টারে নাইট ডিউটিতে ছিলাম। আব্বুর অবস্থা খারাপ শুনে আমি ডিউটি থেকে গিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম। বাট আটকাতে পারলাম না। জ্ঞান থাকা অবস্থায় বলেছিল, বড় বাবু ব্যবস্থা করবে।
‘আমি আব্বু-আম্মুর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। একদম এতিম হয়ে গেছি ছয় মাসের ভেতরে। কোভিড দিয়ে ইনফেকটেড করে মেরে ফেলেছি। নো প্যারেন্টস ডিজার্ভ আ চাইল্ড লাইক মি। হু কিলস দেয়ার প্যারেন্টস উইদইন সিক্স মান্থস। আই থিংক আই শ্যাল নট কনটিনিউ দিস প্রফেশন এনি মোর।’
বিএমএ কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান জসিম বলেন, ‘কী বলব ভাষা হারিয়ে ফেলেছি! ছয় মাসের ব্যবধানে তরুণ চিকিৎসক মা-বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেল।’
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘জাকির বাবা-মা হারানোর ঘটনা বেদনাদায়ক। এখানে কাজ করা সবাই বেশ ঝুঁকিতে আছেন। আমরা সরকারি চাকরিজীবী। মন্ত্রণালয় যেভাবে চাইছে, সেভাবে কাজ করছি। কিছু পরিবর্তনের সামর্থ্য তো আমাদের নেই! আশা করি মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে ভাববে।’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার মতো কুমিল্লাতেও সংক্রমণের হার অনেক বেশি। গত এক সপ্তাহে এখানে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৯৫ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৩০ জন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত সারা দেশে ১৬০ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই করোনার চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন।