সাতক্ষীরায় অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আসার সময় ছেলেকে দুই ঘণ্টা আটকে রাখায় বাবার মৃত্যুর অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক সুভাষ চন্দ্র শিকদারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটিও করা হয়েছে বলে জানান সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, এএসআই সুভাষ চন্দ্র শিকদারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ডিএসবির এএসপি সাইফুল ইসলাম ও ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক ফয়সল তারেক বিন আজিজ। তাদের তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এক ফেসবুক পোস্টে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার বলেন, ‘সাতক্ষীরায় বৃদ্ধের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের এএসআই সুভাষ শিকদারকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে যুক্ত করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বৃহস্পতিবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েন সাতক্ষীরা সদরের বৈচনা গ্রামের রজব আলী মোড়ল। তার ছেলে ওলিউল ইসলাম বাবার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার আনতে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন।
বৃদ্ধের ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা। জরুরি অক্সিজেনের প্রয়োজন হওয়ায় তিনি সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার ব্যবসায়ী আল ফেরদৌস আলফার কাছ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।
লকডাউনে বের হওয়ার জন্য শহরের ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন ইটাগাছা ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক সুভাষ চন্দ্র শিকদার। বার বার বাবার অসুস্থতার কথা জানালেও তিনি ছেড়ে দেননি।
ওলিউল জানান, লকডাউনে বের হওয়ায় তার কাছে এক হাজার টাকা দাবি করে পুলিশ। টাকা দিতে না পারায় তাকে দুই ঘণ্টা সেখানে বসিয়ে রাখা হয়।
তিনি বলেন, ‘পরে ইটাগাছা এলাকার জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকা নিয়ে ওই পুলিশ কর্তা আমাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাড়িতে গিয়ে দেখি অক্সিজেনের অভাবে আব্বা মারা গেছেন।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যদি সময়মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো আব্বাকে বাঁচানো যেত। আমি এর বিচার চাই।’
রজব আলী মোড়লের বড় ছেলে হাফিজুল ইসলাম জানান, ‘আমিও ভাইয়ের সাথে মোটরসাইকেলে ছিলাম। এই ঘটনায় আমি নির্বাক হয়ে গেছি। পুলিশ তো জনগণের সেবক। আর কিছু টাকার জন্য পুলিশ এমন করতে পারে, এটা ভাবতেই পারছি না।’
তিনিও এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে বিচারের দাবি জানান।