মা, বাবা নেই পোশাক কারখানার শ্রমিক তাসনুর বেগমের। আদরের একমাত্র ভাই মহিউদ্দিনকে তিন মাস আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় কাজে দিয়েছিলেন।
সাততলা ভবনের চারতলায় চকলেট বানানোর কাজ করতেন মহিউদ্দিন। বৃহস্পতিবার ওই ভবনে আগুন লাগার পর থেকে তার ফোন বন্ধ। অসংখ্যবার ফোন করেও ভাইকে না পেয়ে রাতভর ভবনের গেটের বাইরে কেঁদেছেন তাসনুর। নিখোঁজ রয়েছে তার আরেক চাচাতো ভাই শামীমও।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রূপগঞ্জের ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির কার্টন কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের চেষ্টায় শুক্রবার সকালেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।তাসনুর বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছোটবেলায় মা মারা গেছে। গত এক মাস আগে বাবার মৃত্যু হইছে। দুইটা সন্তান ছিল। তারাও দুর্ঘটনায় মারা গেছে। একমাত্র ভাই ছিল আমার ভরসা।
‘গ্রামের বাড়ি ভোলা থেকে স্থানীয় এক কন্ট্রাকটরের মাধ্যমে তিন মাস আগে ভাইটা চাকরি নিয়ে আসে এই কারখানায়। সঙ্গে চাচাতো ভাই শামীমও আইছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘কারখানায় আগুনের খবর পাইয়া ভাইগো মোবাইলে ফোন দিছি। প্রথমে মোবাইল বাজলেও তারা ধরেনি। কিছুক্ষণ পর থেকে ফোন বন্ধ পাইছি।
‘রাত ৯টা থেকে কারখানায় ও হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করছি। না পাইয়া অপেক্ষা করতাছি।’তার মতো আগুনে পুড়ে যাওয়া ওই ভবনের চারপাশে অপেক্ষা করছেন অনেকে। কেউ কেউ বিলাপ করছেন। অনেকে আবার নীরব হয়ে বসে আছেন। আবার কখনো ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন তথ্যের জন্য।
বড় বোনের ছেলেকে হারিয়ে প্রায় পাগলের মতো কারখানার এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ছুটছেন লাইজো বেগম। গতকাল সকালে কথা হলেও সন্ধ্যা থেকে তার ভাগনে হাসানের ফোন বন্ধ। স্থানীয় হাসপাতালে খোঁজ করেও পাননি।
ভোলা থেকে দেড় মাস আগে কাজে যোগ দেন হাসান। আগুনের ঘটনার পর থেকে তারও খোঁজ নেই।লাইজো বেগম বলেন, ‘বড় বোনটার অভাবী সংসারে সাহায্য করতে পোলারে কাজে দিছিল। আল্লাহ জানে ওর কী অবস্থা।
‘আমাগো গ্রামের আরও দুইটা পোলা নিখোঁজ। তাদের বাড়ি আমাগো পাশের। ওদের বাড়িতে ঘটনা জানানো হয়েছে। তারাও ওদের খুঁজতে আসতাছে।’স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেসব শ্রমিক চারতলায় কাজ করতেন, তাদের অধিকাংশ ভোলা জেলার। নিচতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত কারখানার বিভিন্ন ফ্লোরে ছিল কিশোরগঞ্জের বাসিন্দারা। আগুনের ঘটনার পর থেকে তাদের মধ্যে অনেকের খোঁজ নেই।
খোঁজ পাওয়া যায়নি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মহিউদ্দিন, মো. শামীম, হাসান, রাকিব, নোমানের। কিশোরগঞ্জের শাহানা, রাহিমা, নাজমুল, মুন্না, আমেনা, খাদিজা, জমিলা ও চাঁদপুরের রিপন, হবিগঞ্জের অমৃতা, নেত্রকোণার তানিয়া ও রূপগঞ্জের রিপনের।সকাল ৮টা পর্যন্ত অন্তত ২০ শ্রমিকের স্বজনকে কারখানার সামনে জড়ো হয়ে বিলাপ করতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে অনেকে হাসপাতালগুলোতে খোঁজ করছেন নিখোঁজ স্বজনের।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমির খশরু নিউজবাংলাকে জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের তালিকা করে খোঁজ করা হবে। আগুন নেভানোর পর এ প্রক্রিয়া শুরু হবে।