শাটডাউনের মধ্যে হাট চালু রাখতে সংসদ সদস্যের ভাই নুরুল ইসলামের চ্যালেঞ্জের মুখে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের নওগাঁ পশুর হাট বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেজবাউল করিম সেনা, র্যাব, পুলিশ নিয়ে নওগাঁ পশুর হাটে অবস্থান নেন। সাপ্তাহিক হাট বারে তারা সব সড়কে টহল বসিয়ে পশু প্রবেশ আটকে দেন।
সারাদেশে শাটডাউনে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে গত সপ্তাহে নুরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘করোনায় হাট বন্ধ রাখতে হবে কে বলেছে? তাড়াশ চলে আমাদের হুকুমে।’ তার হুঙ্কার গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে টনক নড়ে প্রশাসনের।
তাড়াশের ইউএনও মেজবাউল করিম বলেন, করোনার সময়ে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে নওগাঁ পশুর হাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
নওগাঁ পশুর হাটে প্রবেশ ঠেকাতে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। ছবি: নিউজবাংলা
গত ১ জুলাই কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে হাট চলাকালে এই প্রতিবেদককে নওগাঁ পশুর হাট কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় এমপি ডা. আব্দুল আজিজের ভাই নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিয়ম মতোই হাট চালাচ্ছি। ক্রেতা বিক্রেতার কাছ থেকে খাজনা নেয়া আমাদের সিস্টেম। করোনায় হাট বন্ধ রাখতে হবে কে বলেছে ? সাড়ে তিন কোটি টাকা দিয়ে ইজারাদার হাট নিয়েছি কি বন্ধ রাখার জন্য? আমি হাট বন্ধ রাখলে কি সরকার আমার কাছ থেকে টাকা কম নেবে? এসব লিখে কিছুই করতে পারবেন না। তাড়াশ চলে আমাদের হুকুমে।’
নিউজবাংলায় খবরটি প্রকাশের পর শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। এতে প্রশাসনও চ্যালেঞ্জে পড়ে যায় । সকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহসহ র্যাব, পুলিশ ও সেনা সদস্যদের নিয়ে নওগাঁ পশুর হাটে ছুটে যান ইউএনও। বন্ধ করে দেন হাটে ঢোকার সব রাস্তা। এতে চলনবিলের সর্ব বৃহৎ হাটটি বসতে পারেনি। গত বৃহস্পতিবার শাটডাউনের প্রথম দিনে নওগাঁ হাটে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। হাট প্রাঙ্গণের বাইরে নওগাঁ জিন্দানী কলেজমাঠেও বসেছিল গরু-ছাগল, কাঠের আসবাবপত্র ও মাছ ধরার চাঁইয়ের হাট। তবে হাটের কোথাও টোল চার্ট টাঙানো ছিল না।
সিরাজগঞ্জের পশুর হাটগুলোর মাঝে তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ হাট অত্যতম। এবার ভ্যাটসহ ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকায় আকবর আলী নামের এক ব্যক্তি এ হাট এক বছরের জন্য টোল আদায়ের ইজারা নেন।
তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তিনি ইজারা নিয়েই শুরু করেছেন অতিরিক্ত টোল আদায়। এমনকি হাট প্রাঙ্গণের বাইরে নিজস্ব ঘরে যারা ব্যবসা করেন তাদের কাছেও তিনি টোল দাবি করছেন। ব্যবসায়ীরা এসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেছেন।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার ভাংগুড়া, চাটমোহর ও নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী করতোয়া নদীর তীরে নওগাঁ হাট অবস্থিত। সড়ক ও নৌপথে যোগাযোগব্যবস্থার কারণে পাঁচ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ প্রতি বৃহস্পতিবার নওগাঁ হাটে কেনাবেচার জন্য আসেন।
ইউএনও মেজবাউল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউনে মানুষের জীবন রক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নওগাঁ পশুর হাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে হাট কমিটির লোকজন আপনাদের বিভিন্ন কথা বলেছেন। আমরা লকডাউনের শুরু থেকেই তাদের নিষেধ করে আসছি। কিন্তু হাটের কিছু ব্যক্তি প্রশাসনের কথা অমান্য করে নিজেদের মতো হাট পরিচালনা করে। আপনাদের সংবাদটি প্রচারের পর ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে আজ কঠোর অবস্থান নিয়ে হাটের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।’