ঢাকার সাভারে সুদের টাকা শোধ করার চাপে এক হোটেল কর্মচারী আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আশুলিয়ার ধলপুর এলাকায় বুধবার বেলা ২টার দিকে ভাড়া বাসার সামনে লিচুগাছ থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
৫০ বছর বয়সী ওই হোটেল কর্মচারীর নাম হারুন ওর রশিদ। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার রাধাকান্তপুর গ্রামে।
রশিদের বড় মেয়ে তাছলিমা আক্তার নিউজবাংলাকে জানান, তার বাবা আগে কাঠগড়া এলাকায় হোটেল ব্যবসা করতেন। মা চাকরি করেন গার্মেন্টসে। দুই বোন থাকেন শ্বশুরবাড়ি।
করোনায় তার বাবার হোটেল বন্ধ হয়ে যায়। কাজ শুরু করেন অন্যের হোটেলে। সে সময় তিনি দুই লাখ টাকা ধার করেন। গত ঈদের আগে থেকেই সুদসহ টাকা শোধ করার চাপ আসতে থাকে।
২০ দিন আগে তিনি কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে চলে যান। ফোনও বন্ধ রাখেন। এরপর চার-পাঁচ দিন আগে বাসায় ফেরেন।
তাছলিমা বলেন, ‘সুদের টাকার জন্য দুই-তিন দিন আগে এলাকার ফিরোজা বেগম আর তার পরিবারের লোকজন বাবাকে চাপ দিছিল শুনছি। সুদের টাকার চাপেই আমার বাবা আত্মহত্যা করছে।’
স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাগো এলাকায় সুদখোরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সবাই। অ্যার আগেও একজন চাপে পড়ে ২ শতাংশ জমি বিক্রি করে সুদের টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত হইছে। আরেকজন বাড়ি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে পালাইছে।
‘ফিরোজা বেগম ছাড়াও এলাকার প্রভাবশালী অনেকেই সুদের ব্যবসা করে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলার সাহস পায় না।’
ফিরোজা বেগমের বাড়িতে গেলে তিনি হাসপাতালে গেছেন বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা।
তার ভাই আফাজ দেওয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ওনার কাছে ১০ ট্যাকা পামু না। উনিও আমাগো কাছে ১০ ট্যাকা পাইবো না। সুদ বলতে তো আমি বুঝি না কিছু। আমাগো এলাকায় সুদের কারবার তো নাই।’
তবে সুদের কারবার হয় বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ আলী সরকার।
তিনি বলেন, ‘ধলপুর এলাকায় অনেকেই সুদের ব্যবসা করে, এটা আমি জানি। এমনও শুনেছি এখানে নাকি ঘণ্টায় ২০০ টাকা হারেও সুদ দেয় অনেকে। তবে কে কে করে এটা জানি না।
‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি বলছি, সুদের ব্যবসা করা হারাম। সুদের সঙ্গে জড়িত সব কাজই হারাম।’
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইউনুছ আলী বলেন, ‘মরদেহ তার বাসার সামনে লিচুগাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
সুদের টাকার জন্য ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসআই ইউনুছ।