চাঁদার দাবিতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন মৃতদের স্বজনরা।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের সামনের এ ঘটনাকে ঘৃণিত কাজ বলে উল্লেখ করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত নেতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অ্যাম্বুলেন্সের কয়েকজন চালক নিউজবাংলাকে জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সচালকদের কাছে চাঁদা দাবি করেন মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি অনুপম সাহার অনুসারীরা। চাঁদা না পেয়ে সকালে হাসপাতালের সামনের সব অ্যাম্বুলেন্সের চাবি নিয়ে যান তারা।
করোনা ওয়ার্ডে মারা যাওয়া নেত্রকোণায় আব্দুস সাত্তারের স্বজন সবুজ মিয়া বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতারা অ্যাম্বুলেন্সের চাবি নিয়ে যাওয়ার পর থেকে পাঁচ ঘণ্টা বসেছিলাম। কিন্তু চাবি না দেয়ায় অ্যাম্বুলেন্স থেকে মরদেহ নামিয়ে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে নেত্রকোণার উদ্দেশে ৪টার দিকে রওনা হয়েছি। মরদেহ নিয়ে অনেক ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা।’
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী নাহিদা ইয়াসমিন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের ৪০৬ নম্বর ওয়ার্ডে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের সব প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ নিয়ে বের হয়ে বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করেছি।
‘মরদেহ নিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সচালক রাসেলকে পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া করি। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা এসে চালকের সঙ্গে রাগারাগি করে গাড়ির চাবি নিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে মরদেহ নিয়ে রওনা হয়েছি।’
এই দুজন ছাড়াও বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬-৭ জনকে মরদেহ নিয়ে হাসপাতালের সামনে বসে থাকতে হয়েছে।
অ্যাম্বুলেন্সচালক জয়নাল আবেদীন জানান, সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় মেডিক্যাল কলেজ শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি অনপুম সাহার ৫-৬ জন অনুসারী অ্যাম্বুলেন্সচালকদের বলে গেছেন, ছাত্রলীগ নেতাদের অনুমতি ছাড়া কোনও অ্যাম্বুলেন্স মরদেহ কিংবা রোগী নিয়ে যাবে না। অনুপমের সঙ্গে দেখা করে অ্যাম্বুলেন্স প্রতি টোকেন মানি দিতে রাজি হলে রোগী ও মরদেহ নেয়া যাবে। এর বাইরে নয়।
তিনি আরও জানান, এমন ঘোষণার পর জরুরি বিভাগের সামনে থেকে সব অ্যাম্বুলেন্স বের করে দেয় অনুপমের অনুসারীরা। বিষয়টি সমাধানে রাতেই ছাত্রলীগ সভাপতি অনুপমের সঙ্গে দেখা করেন অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম মিয়া। আগামী শুক্রবার এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা।
কিন্তু মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে চালকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে সব অ্যাম্বুলেন্সের চাবি নিয়ে যান অনুপমের অনুসারীরা। এতে হাসপাতাল থেকে বের হওয়া সব মরদেহ আটকে পড়ে। অ্যাম্বুলেন্সের চাবি নিয়ে যাওয়ায় চালক ও সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ময়মনসিংহ অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম মিয়া বলেন, ‘এ ব্যাপারে মেডিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষের কাছে বিচার চেয়ে আবেদন করব। তবে আমরা কাউকে চাঁদা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা করব না।’
ময়মনসিংহ জেলার সাবেক ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদ জাহান শাহীন বলেন, ‘এটি অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। ছাত্রলীগকে চাঁদাবাজি করার দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এ ঘটনায় জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাদের আমরা বলার পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি দিয়ে গেছেন। পরে চালকদের চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর লাশ নিয়ে গন্তব্যে গেছেন অ্যাম্বুলেন্সচালকরা।’
চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি অনপুম সাহার ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে তাকে পরিচয় জানিয়ে এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি জবাব দেননি।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ওয়ায়েজ উদ্দীন ফরাজী বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সচালকদের সমস্যা হওয়ার ঘটনাটি জানতে পেরেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সুরাহা করবে।