লক্ষ্মীপুরে শহরের প্রদীপ মজুমদার করতেন স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবসা। বছর ১০ আগে সেই ব্যবসা ছেড়ে শহরের কলেজ রোডে করেন লুবনা ফার্মেসি।
সেই ফার্মেসিতেই চিকিৎসক হিসেবে খুলেছেন চেম্বার, দিচ্ছেন ব্যবস্থাপত্রও। চিকিৎসক না হয়েও তার ব্যবস্থাপত্র দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
প্রদীপের দাবি, তিনি ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল সাইন্স ডিগ্রি নিয়েছেন। সেই অনুযায়ী তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তার ব্যবস্থাপত্রেও চিকিৎসক লেখা নেই।
তবে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি এই ডিগ্রি নিয়েছেন তা বলেননি।
প্রদীপ প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারবেন বলে দাবি করলেও এর আগে ব্যবস্থাপত্র দেয়ায় তিনি জেল খেটেছেন। নানা অনিয়মের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে দুই মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল। তবে কারাগার থেকে বের হয়ে আবার তিনি ব্যবস্থাপত্র দেয়া শুরু করেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রদীপের পরিচয় মূলত যৌন চিকিৎসক হিসেবে। তার ফার্মেসি, গুদাম ও বাসায়ও যৌন রোগের দেশি-বিদেশি নানা ওষুধ রয়েছে। তবে প্রদীপ নিজেকে সব রোগের বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাও দেন।
প্রদীপের বেশ কয়েকটি ব্যবস্থাপত্র নিউজবাংলার প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের এগুলো দেখানো হলে তারা জানান, ব্যবস্থাপত্রের এসব ওষুধ সেবন করলে রোগীর ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবস্থাপত্রগুলো অসম্পূর্ণ বলেও জানান তারা।
সদর হাসপাতালের চিকিৎসক সালাউদ্দিন যৌন রোগের একটি ব্যবস্থাপত্র দেখে জানান, ওই রোগীকে যে তিনটি ওষুধ দেয়া হয়েছে তা উচ্চশক্তির। এ ধরনের ওষুধ নিয়মিত খেলে যে কোনো সময় রোগীর হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। যৌন শক্তিও হারিয়ে যেতে পারে।
জয়নাল আবেদীন নামে আরেক চিকিৎসক দুটি ব্যবস্থাপত্র দেখে জানান, ব্যবস্থাপত্রগুলো অসম্পূর্ণ। রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হলেও কত শক্তির খেতে হবে তা লেখা হয়নি। কতবার খেতে হবে তাও বলা হয়নি।
কয়েকজন অভিযোগ করেন, প্রদীপ চীন ও ভারতের যেসব হারবাল ওষুধ বিক্রি করেন সেগুলোর দামও রাজধানীর থেকে কয়েকগুণ বেশি রাখা হয়। এ ছাড়া ওষুধের বোতলে মূল্য লেখা থাকে না। সরকারি অনুমোদনের নম্বরও পাননি।
তারা জানান, প্রদীপের রোগী আসে প্রচারের কারণে। জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় তার লোক আছে। তারা রোগীদের তার কাছে পাঠান। বিনিময়ে তাদের টাকা দিয়ে খুশি রাখেন প্রদীপ।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রদীপের কাছে আসা দুইজন রোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শে প্রদীপের কাছে চিকিৎসা নিতে যান তারা। তিনি অনেক বড় ডাক্তার বলে শুনেছেন। তবে তার কথাবার্তা চিকিৎসকের মতো মনে হয়নি তাদের।
এ বিষয়ে প্রদীপ মজুমদার জানান, ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল সাইন্সে ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি। সে অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এর বেশি কিছু নয়।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের জেলা তত্ত্বাবধায়ক (ড্রাগ সুপার) সুশীল কুমার ডালী জানান, চেম্বারে বসে কারা চিকিৎসা দেন তাদের তালিকা চেয়েছেন সিভিল সার্জন। তার নির্দেশে ২৫ জনের তালিকা জমা দেয়া হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন আবদুল গফফার জানান, ডাক্তার না হয়ে প্রদীপ মজুমদার চিকিৎসা করতে পারেন না। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। তার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।