রাঙ্গামাটি শহরে ছয়টি দোকান ধসে পড়ার ঘটনায় জেলা পরিষদকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, কাপ্তাই হ্রদ দখল করে ভবন নির্মাণ করায় মাটি সরে গিয়ে ধস হয়। জেলা প্রশাসনও বলছে, সেখানে জেলা পরিষদের ভবন তৈরির অনুমোদন ছিল না। তবে জেলা পরিষদের দাবি, বৈধভাবেই ভবন নির্মাণ চলছে।
রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারের কাপ্তাই হ্রদের তীরে মূল সড়কের সঙ্গে গড়ে তোলা ছয়টি দোকান ধসে খাদে পড়ে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। সোমবার (৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ দোকানগুলো ধসে পড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও আসবাব ও দোকানের জিনিসপত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান দোকানগুলোর ব্যবসায়ীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধসে যাওয়ার আগমুহূর্তে টের পেয়ে তাৎক্ষণিক দোকান থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান দোকানে থাকা লোকজন।
ধসে পড়া একটি দোকানের মালিক মো. হেলাল, ওই এলাকার একটি আবাসিক হোটেলের মালিক শফিউল আজম ও প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম নিউজবাংলাকে অভিযোগ করেন, ওই দোকানগুলোর নিচে কাপ্তাই হ্রদ দখল করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। সেটির বেজ ঢালাই এবং প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের জন্য মাটি কাটা হচ্ছিল। এর মধ্যে টানা বৃষ্টি হওয়ায় মাটি আরও সরে যাওয়ার কারণে ওই ধসের ঘটনা ঘটে। এর আগে কখনই এই জায়গায় ধস হয়নি।
পাল্টা যুক্তিতে পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর বলেন, ‘ভবনটি জেলা পরিষদের নিজস্ব জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদ দখল করে এটির নির্মাণকাজ করা হচ্ছে না। এটি টেকসই এবং নিরাপদ।
ভবনটি নির্মাণে ওই জায়গা থেকে এক ইঞ্চি মাটিও কাটা হয়নি। আসল বিষয় হচ্ছে, দোকানগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। কোনো প্রকার মেরামত করা হয়নি। তাই হঠাৎ ধসের ঘটনাটি ঘটেছে। আর ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে ব্যাপক জনস্বার্থে, যা ছিল দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শিল্পী রানী রায় বলেন, সাবেক জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ দায়িত্বপালনকালে কাপ্তাই হ্রদ দখল করে নির্মাণকাজ শুরু করায় জেলা পরিষদের ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধের নিদের্শনা দেয়া হয়েছিল।
শিল্পী রানী জানান, এখন যে সেখানে ভবন তৈরি হচ্ছে, তা তিনি জানতেন না। এ বিষয়ে শিগগিরই পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তবে এ তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি জেলা পরিষদের সদস্য মুছা মাতব্বরের। তিনি বলেন, ‘জেলা পরিষদ নিজস্ব জায়গাতে কমিনিউটি সেন্টার নির্মাণকাজ শুরু করেছে প্রায় ছয় বছর আগে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সে ধরনের কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।’
রাঙ্গামাটি পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর করিম আকবর বলেন, দোকানগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। অনেক আগে থেকে দোকানদারদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল। আগে দোকানগুলো থেকে মালামাল সরিয়ে নিয়ে গেলে হয়তো এত বড় ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটত না।
ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ধসের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এরপরই কারণ বোঝা যাবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।