লকডাউনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় আহত বাগমারার কলেজ শিক্ষক আব্দুল আজিজ এখনো সুস্থ হননি। বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
শিক্ষক আব্দুল আজিজের দাবি, বাগমারার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান লাঠিপেটা করে তাকে আহত করেছেন। আঘাতে হাতের হাড় ভেঙে গেছে।
লকডাউন কার্যকরে আভিযান পরিচালনার কথা জানিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান জানান, শিক্ষককে তিনি পেটাননি। রাস্তায় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন শিক্ষক।
স্থানীয় লোকজন জানান, আব্দুল আজিজ পুঠিয়া উপজেলার সাধনপুর পঙ্গু ও শিশু নিকেতন ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শিকদারী গ্রামে নিজ বাড়ির সামনেই তিনি আহত হন।
ঘটনার বিষয়ে শিক্ষক আব্দুল আজিজ বলেন, 'ডায়াবেটিসের কারণে প্রতিদিনই বিকেলে হাঁটাহাটি করি। ঘটনার দিন বিকেলেও হাঁটার জন্য বের হয়েছিলাম। এ সময় আচমকা পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনতে পাই। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে শিকদারী বাজারের লোকজন দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন এসিল্যান্ড লাঠি হাতে নিয়ে তাদের তাড়া করেন। কিন্তু দৌঁড়াতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান এসিল্যান্ড।'
শিক্ষক আজিজ জানান, কিছুক্ষণ থেমে আবার হাঁটা শুরু করলে এসিল্যান্ড থামতে বলেন তাকে। এক পর্যায়ে ধাক্কা মেরে ঠেলে নিয়ে যান। কলেজে চাকুরি করার কথা জানালেও এসিল্যান্ড লাঠি দিয়ে তার হাতে আঘাত করেন। লাঠির আঘাতে হাতের হাড় ভেঙে গেছে বলে পরে পরীক্ষায় দেখা যায়।
আব্দুল আজিজের ভাঙা হাতের এক্সরে। ছবি: নিউজবাংলা
শিক্ষক আজিজ বলেন, ‘ঘটনার পর এলাকার লোকজন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরদিন ইউএনও শরিফ আহমেদ ও এসিল্যান্ড আমার বাড়িতে আসেন। তারা দুঃখ প্রকাশ করে অনেক কথা বলেন। আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।’
তিনি আফসোস করে বলেন, ‘ওইদিনের পর তারা আমার আর কোনো খবরই নেয়নি। আমি ভাঙা হাত নিয়ে এখন চরম কষ্টে আছি। হাতের কারণে আমার অন্যান্য সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।’
বাগমারার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমরা লকডাউনের প্রথম দিনে বিভিন্ন বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছিলাম। শিকদারী বাজারে গেলে আমাদের গাড়ি দেখে অনেকে দৌড়ে পালাচ্ছিলেন।
‘আব্দুল আজিজের সঙ্গে হওয়া ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। ঘটনার পরদিন তার খবর নেয়া হয়েছে। তিনি ধন্যবাদও দিয়েছেন।’
ইউএনও শরিফ আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি তেমন ছিল না। সেদিন বৃষ্টি ছিল। শিক্ষক আব্দুল আজিজ পিছলে পড়ে যান। এরপর আমরা তার বাড়িতে গিয়েছিলাম।’
ঐ দিন ক্ষমা চেয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘বিষয়টি ক্ষমা চাওয়ার না। একজন ইউএনও সব জায়গাতেই যাবে। যেহেতেু শিক্ষক অভিযোগ করেছিলেন, সে জন্য আমরা গিয়েছিলাম। যদিও আমরা জানি হুড়োহুড়িতে পড়ে গিয়েই তার হাত ভেঙে গেছে।’
এদিকে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখার সহসভাপতি একরামুল হক বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সারা দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা মিটিং ছিল। সেখানে সবাই ঘটনা শুনে নিন্দা জানিয়েছেন। তারা এ্যসিল্যান্ডের বিচার দাবি করেছেন।’