ঝালকাঠিতে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। বন্ধ রাখা হয়েছে সব দোকানপাঠ। শাটডাউন বাস্তবায়নে জেলায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও র্যাব সদস্যরা।
এ অবস্থায় চরম খাদ্য সংকটে পড়েছেন জেলার নিম্নবিত্ত-খেটে খাওয়া তাসলিমা ও হাজেরা বিবির মতো দৈনিক খেটে খাওয়া মানুষেরা।
ঝালকাঠি জেলার কৃষ্ণকাঠিতে চালের পিঠা বিক্রি করেন বিধবা তাসলিমা বেগম। মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। শাটডাউনে বন্ধ তার সেই পিঠা বিক্রির খুপরি দোকান। ঘরেও খাবার শেষ।
এমন অবস্থায় নিজের খাবার সংস্থান করতে আবার বসেন পিঠা বিক্রিতে। তবে এবার পুঁজি মাত্র আড়াইশো গ্রাম চাল। সেটা থেকে আটা তৈরি করে সোমবার বিকেলে বসেন পিঠা বিক্রিতে।
ঘড়ির কাঁটা ঠিক সন্ধ্যা ৭টা। তখন পর্যন্ত পিঠা বিক্রি হয়েছে ৯টি। যার দাম ৪৫ টাকা।
তাসলিমা বললেন, ‘রাস্তায় মানুষ নাই, মোর পিডা খাইবে কেডা। যা বেচছি হেতে পঁয়ত্রিশ টাহা পাইছি। কাইল কি খামু জানি না। মানের বাড়ি কাম হরমু, হেয়াও করুনা রোগের লইগ্যা রাকপে না। কেউ সয় সাহাজ্যও দেয় না।’
তাসলিমা জানান, করোনার কারণে এখন যে শাটডাউন চলছে এতে খুব কড়াকড়ি হচ্ছে। মাঝে মাঝেই পুলিশ টহল দিচ্ছে। দোকান খুলতে পারছেন না কেউই। আর রাস্তা ঘাটেও লোকজন একেবারে নেই বলেও জানান।
নিজের ও তার মেয়ের দিনের কাদ্য সংস্থান করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে বলেও জানান। সেই সঙ্গে তিনি এই অবস্থায় সহায়তাও চান সরকারের কাছে।
ঝালকাঠি-বরিশাল মহাসড়কের পাশে তালুকদার ফিলিং স্টেশনের সামনে চা, পান বিক্রি করে সংসার চালায় স্বামীহারা বৃদ্ধা হাজেরা বিবি। তার অবস্থাও তাসলিমার মতই।
সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে কেউ খাদ্য সহায়তাও দিচ্ছে না।
হাজেরা বলেন, ‘দোহান খোললে মবিল কোডে বাইশশো টাহা জরিমানা হরবে। মোর দোহানের দাম বাইশশো টাহাও নাই। চা বাইয়া বেচমু কারডে, রাস্তায় কেউ নাই, ঘরে খাওন নাই, মোর এহন মরন ছাড়া গতি নাই।’
করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হলে গত বছরের মার্চে সরকার যখন লকডাউন ঘোষণা করে তখন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অসহায়-দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছিল। এবার তেমনটা চোখে খুব কম পড়েছে।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আহম্মেদ হাছান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছু বরাদ্দ এসেছে। সেগুলো এক-দুদিনের মধ্যে উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে উপবরাদ্দ দেয়া হবে। এরপর সেগুলো বিতরণ করা হবে।’