ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার নিবন্ধন ও ফি জমা দিতে গিয়ে প্রবাসীরা ভোগান্তি পড়ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিন দিন ধরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) গিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছেন তারা। কিন্তু কারিগরি ত্রুটির কারণে বারবার চেষ্টা করেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) নির্ধারিত ফি পাঠাতে পারছেন না অনেকে।
টিটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ধীরে কাজ করছেন না বলে অভিযোগ করেছেন নিবন্ধন করতে আসা প্রবাসীরা।
সোমবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সদর উপজেলার চিনাইর গ্রামে টিটিসির ভেতর ও বাইরে প্রবাসীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, টিটিসির ভেতরে সীমানাপ্রাচীর–সংলগ্ন নিবন্ধনের কক্ষ। সেখানে ১২টি কম্পিউটার নিয়ে বসেছেন টিটিসিকর্মীরা। কিন্তু প্রবাসীরা কিছুতেই বিএমইটির ফি জমা দিতে ও নিবন্ধন করতে পারছেন না।
কারিগরি ত্রুটির জন্য বিকাশ, নগদ বা রকেটের মাধ্যমে নিবন্ধনের নির্ধারিত ২০০ টাকা জমা দিতেই সমস্যায় পড়ছেন তারা। টাকা কাটা হলেও অনেকের ফি বিএমইটিতে জমা হয়নি বলে দেখানো হচ্ছে।
শনিবার বাঞ্ছারামপুর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়েছিলেন নবি মিয়া।
তিনি জানান, নিবন্ধনের জন্য দুই দিন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এলাকায় রুম ভাড়া নিয়ে থেকেছেন। নগদ অ্যাপের মাধ্যমে ফি জমা দিয়েছেন; টাকাও কেটে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বিএমইটিতে সোমবার পর্যন্ত পেমেন্ট দেখাচ্ছে না।
নিবন্ধন করতে প্রবাসীদের দীর্ঘ লাইন
নিবন্ধনের জন্য সরাইল উপজেলা থেকে আসা শামসুল হক সোমবার সকাল থেকে অপেক্ষা করছিলেন টিটিসিতে।
চার ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই নিবন্ধনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে। একবার তারা ব্রেকফাস্টে যায়, আরেকবার ওয়াশরুমে, আরেকবার অন্য কাজে তারা নিবন্ধন রুম থেকে বেরিয়ে যান।
‘আর তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ১৫-২০ মিনিট। সকাল থেকে তীব্র রোদে এত লোকের সমাগম। একজন লোকের নিবন্ধন করতে তারা ১৫-২০ মিনিট নিচ্ছে। খুব কম গতিতে নিবন্ধনের কাজ করায় ভোগান্তিতে রয়েছি।’
প্রবাসীরা জানান, টিকার জন্য তাদের দুই দফা নিবন্ধন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রথমে বিএমইটি এবং পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুরক্ষা ডটকম ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর তাদের মুঠোফোনে টিকা নিতে বার্তা যাবে। এজন্য ২ জুলাই থেকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে।
তারা আরও জানান, সেই বার্তা দেখালে শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে।
টিটিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রবাসীদের নিবন্ধনে সহায়তা করতে শুক্রবার থেকে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অধীন দেশের ৪২টি জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় এবং ৯টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র সীমিত পরিসরে খোলা রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়।
টিটিসির কর্মচারী রাকিব জানান, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা জমা দেয়ার পর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে দেয়া হচ্ছে। বিএমইটিতে নিবন্ধনের পরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুরক্ষা ডটকম ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করা যাবে। এর পরই টিকা নেয়ার জন্য মোবাইল ফোনে বার্তা যাবে।
টিটিসির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রবাসীদের দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা নিবন্ধন কার্যক্রমে লোকবল বাড়িয়েছি। রোববার পর্যন্ত নিবন্ধ কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত লোক সংখ্যা ছিল আটজন।
‘সোমবার প্রবাসীদের চাপার বাড়ায় টিটিসির নিজ উদ্যোগে আরও ৪ জন লোক বাড়িয়ে নিবন্ধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।’