বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রবাসীদের টিকার নিবন্ধন: কলম ‘ভাড়া’ ১০ টাকা

  •    
  • ৪ জুলাই, ২০২১ ১৯:৪৮

‘নিবন্ধন করতে আসা প্রবাসীদের থেকে স্থানীয় দালাল চক্র বাড়তি দামে জিনিসপত্র বিক্রি করছে। ফটোকপি দুই টাকার জায়গায় ১০ টাকা। প্রতিজনের কাগজে স্ট্যাপলিং করা ১০ টাকা। কাগজে মোবাইল নম্বর লিখতে কলম ভাড়া ১০ টাকা নিচ্ছে।’

কলম ভাড়া নিতে শুনেছেন কখনও? হ্যাঁ, ফেনী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সামনের দোকানে একটি মোবাইল নম্বর লেখার জন্য কলম ভাড়া দিতে হয় ১০ টাকা। কাগজে স্ট্যাপলার করার জন্য ১০ টাকা। ফটোকপিও প্রতিকপি ১০ টাকা।

রোববার দুপুরে কুয়েত প্রবাসী মিজানুর রহমান ও শহিদুল ইসলাম করোনার টিকার নিবন্ধন শেষে এভাবেই তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান।

লকডাউনে প্রবাসীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এভাবেই ব্যবসা করছেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সামনের দোকানগুলোর অসাধু ব্যবসায়ীরা। গত দুই দিনে এভাবেই করোনার টিকার নিবন্ধন করতে আসা প্রবাসীদের থেকে টাকা নিয়েছেন তারা।

প্রবাসীরা জানান, টিকার নিবন্ধন করতে এসে ফেনী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে এসে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। ওয়েবসাইটে অফিসের যে ঠিকানা দেয়া হয়েছে তা কয়েক বছর আগের। এ কারণে ভুল ঠিকানায় গিয়ে আবার শহরের আরেকপ্রান্তে বর্তমান অফিসে আসতে হচ্ছে।

নতুন অফিসে আসার পরও ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না। প্রবাসীদের অভিযোগ, সার্ভার জটিলতায় অফিস কর্তৃপক্ষ তাদের থেকে শুধুমাত্র কাগজপত্র রেখে ছেড়ে দিচ্ছে। তাদের কবে কখন কীভাবে রেজিস্ট্রেশন হবে? তারা কখন টিকা পাবেন অফিসের কর্মকর্তারা কিছুই বলছেন না।

তারা জানান, এ কারণে অনেকে অফিসের সামনের দোকানগুলোতে নিবন্ধন করতে যাচ্ছেন। কিন্তু সেখানে ব্যবসায়ীরা তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একটা মোবাইল নম্বর লেখার জন্যও ১০ টাকা কলম ভাড়া নিচ্ছে। অন্য সবকিছুর জন্যও কয়েকগুণ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে।

প্রবাসী মিজানুর বলেন, ‘আমরা প্রবাসী। আমাদের বলা হয়, রেমিট্যান্সযোদ্ধা। দেশে বেকারত্বের অবসান ঘটিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখছি আমরা। মা-বাবা স্ত্রী ছেলে-মেয়েসহ নিকট আত্মীয়দের থেকে দূরে থেকে রেমিট্যান্স পাঠাই দেশে।

‘চলমান লকডাউনে দেশে এসে বেকায়দায় পড়েছি। আবার যাওয়ার আশায় টিকার জন্য কখনও রাজধানী, কখনও জেলা শহরে ছুটে হয়রানির শিকার হচ্ছি।’

ফেনী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সামনে ভিড়

এর আগে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৩ জুলাই থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত সৌদি আরব ও কুয়েতগামী কর্মীদের ডাটাবেজে নাম নিবন্ধন করা হবে। ফেনীতে নিবন্ধনের তারিখ দেয়া হয় ৩ ও ৪ জুলাই।

সেই অনুযায়ী, ফেনীর প্রবাসীরা করোনা টিকার নিবন্ধন করতে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে যান।

কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই নিবন্ধন করতে আসা প্রবাসীদের মধ্যে। ভিড় করে ফরম জমা দিচ্ছেন তারা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ওয়েবসাইটে আগের ঠিকানা দেয়া নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে তর্কে জড়াচ্ছেন।

প্রবাসীরা জানান, অনেকের টিকিটের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আগে বিদেশ গিয়ে কোয়ারেন্টিনে থাকা যেত। সৌদি সরকার সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে বলে শুনেছেন। এখন দেশেই কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

দ্রুত টিকা দিতে না পারলে তাদের বিদেশ যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এ কারণে টিকা পেতে তাদের তাড়া আছে।

সৌদি প্রবাসী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিবন্ধন করতে আসা প্রবাসীদের থেকে স্থানীয় দালাল চক্র বাড়তি দামে জিনিসপত্র বিক্রি করছে। ফটোকপি দুই টাকার জায়গায় ১০ টাকা। প্রতিজনের কাগজে স্ট্যাপলিং করা ১০ টাকা। কাগজে মোবাইল নম্বর লিখতে কলম ভাড়া ১০ টাকা নিচ্ছে।

‘লকডাউনের কারণে দোকানপাট বন্ধ থাকায় বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে প্রবাসীদের। এমন জঘন্য আচরণ, আমরা আর কখনও মুখোমুখি হইনি।’

ঈসা মিয়া বলেন, ‘ওয়েবসাইট দেখে লকডাউনের মধ্যে টাকা খরচ করে ফেনীর সেলিনা পারভিন সড়কে যাই। সেখানে গিয়ে আলাপ করলে মানুষজন বলেন, ২০১৭ সালে এখান থেকে অফিসটি স্থানান্তর হয়ে গেছে।

‘লকডাউনের মধ্যে বেশি টাকা খরচ করে এখানে এসেছি। এমনিতেই পকেটে টাকা নেই। আজ আবার বাড়তি ১২ শ টাকা খরচ হয়েছে।’

সরকারি ওয়েবসাইটে দেয়া আগের ঠিকানা

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক নীহার কান্তি খীসা বলেন, ‘সার্ভার জটিলতা আছে। মানুষ কিন্তু সার্ভারে চেষ্টা না করে সোজা এখানে চলে আসে। আমরা এখন সব প্রবাসীর কাগজ নিচ্ছি।

‘এখান থেকে সৌদি ও কুয়েতকে আলাদা করে রেজিস্ট্রেশন করব। বাইরে বাড়তি টাকা আদায়ের কথা শুনেছি। এজন্য আমি সেখানে ১০টি কলম ঝুলিয়ে দিয়েছি। আর বাড়তি টাকা নিতে পারবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর