‘গত বছর বন্যায় হামার ১০ বিঘা জমির ধান লষ্ট হইয়া গেছিল। বাড়ির ভেতর পানি ঢুকা পড়িছলো। সব মিলা হামার ৮ লাখ টেকার মতো ক্ষতি হসলো।
‘একন যেভাবে নদীর পানি বাড়িচ্ছে তাতে করা ভয় হচ্ছে আবার যদি বন্যায় সব ডুবা যায় তালে খুব বিপদে পড়া লাগবে পরিবার লিয়া।’
প্রচণ্ড বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে নওগাঁর প্রধান দুই নদী ছোট যমুনা ও আত্রাইয়ের পানি বাড়ায় নিজের দুশ্চিন্তার কথা এভাবেই জানাচ্ছিলেন আত্রাইয়ের শাহগোলা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ছোট যমুনা নদীর লিটন ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার ও আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে প্রতিদিনই নদীগুলোতে যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে জেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মান্দা উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের কৃষক আফাজ উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবছরই বন্যা আসা হামাকেরে সব তলা লিয়া যায়। এবারও নদীর পানি বাড়িচ্ছে। আতঙ্ক লাগিচ্ছে না জানি এবার কী হয়।
‘গত বছর হামার ঘর ও পাঁচ বিঘা জমি পানিত ডুবা গেছলো। তখন সরকার যে খাবার দিসলো সেডা খাইয়া-পরা কোনো রকমে কাটা উঠা পারিছি। আবার বন্যা যদি চলা আসে কী যে হবে ভাববার পারিচ্ছি না।’
গত বছর বন্যায় রাণীনগর উপজেলার আতাইকুলা গ্রামের কৃষক রমজান আলীর দুটি পুকুরের মাছ ও সাত বিঘা জমির ধান তলিয়ে গিয়েছিল। এতে তার প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছিল।
এবারও নদীর পানি বাড়ায় আতঙ্ক বাড়ছে রমজান আলীর।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান খান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা সব সময় মনিটর করছি। জেলার যেসব উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ আছে তা পরিদর্শন করছি। আমরা চেষ্টা করছি মেরামত করার।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কামরুল আহসান জানান, গত বছর বন্যায় ৪৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যার পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কয়েক দিনের মধ্যেই কিছু সহায়তা আসবে নওগাঁয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জেলায় ৪ হাজার ১৪৪ হেক্টর জমির ধান ও শাকসবজি ডুবে গিয়েছিল। এরপর পানি নেমে যাওয়ায় ৩ হাজার ৯৭৬ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়। ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৬০ কোটি টাকা।
গত বছর জেলার ৩ হাজার ৭৮০টি পুকুর প্লাবিত হয়েছিল যা আয়তনে প্রায় ৩১০ হেক্টরের মতো। ক্ষতির পরিমাণ ২২ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস।