দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনের উচ্চ সংক্রমণের মধ্যেই সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর এলাকায় অবাধে চলাফেরা করছেন প্রতিবেশী দেশটির ট্রাকচালক ও তাদের সহকারীরা। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে তারা স্থানীয় বাজারে আড্ডা দেয়ায় সংক্রমণের আতঙ্কে ভুগছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কার্যক্রম না থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে। তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ-জোহরার দাবি, শ্রমঘন এলাকায় লকডাউন মানানো খুবই কঠিন। তারপরও ব্যবস্থা নেবেন।
সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দুই দেশের নাগরিকদের যাওয়া-আসা বন্ধ প্রায় দেড় বছর ধরে। তবে আমদানি-রপ্তানি চালু থাকায় প্রতিদিন গড়ে দুই-তিন শ ট্রাক ঢোকে স্থলবন্দরে।
সেই হিসাবে প্রতিদিন পাঁচ-ছয় শ ভারতীয় ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশ করেন। ভারতের এসব নাগরিক পার্কিংয়ের জায়গায় ট্রাক রেখে স্থানীয় চায়ের দোকান ও বাজারে ঘুরে বেড়ান।
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের অভিযোগ, ভারতীয় ট্রাকচালকরা গাড়ি রেখে ইচ্ছামতো ভোমরা বন্দর, বাজার, হোটেল, চা, মুদি দোকানসহ সব স্থানে অবাধে ঘুরে বেড়ান। স্থলবন্দরে কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যেও তারা মুখে মাস্ক না পরে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধে ঘোরাফেরা করেন। এমনকি সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই স্থানীয় কাঁচাবাজারসহ লোকালয়ে এসে কেনাকাটা করেন।
ভারতীয় ট্রাকচালক ও তাদের সহকারীদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন জানায়, ভোমরা সীমান্তের বিপরীতে ভারতীয় স্থলবন্দর ঘোজাডাঙ্গায় করোনার নমুনা ও উপসর্গ শনাক্তের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকচালকরা নমুনা ও উপসর্গ পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশ করছেন।
এতে স্থলবন্দর এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে করোনার ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের তাপমাত্রা মাপার জন্য অবশ্য বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্র খোলা হয়েছে জানানো হয়েছে। বলা হয়, ভারতীয় ট্রাকচালকরা স্থলবন্দরে প্রবেশের আগে এই পরীক্ষা কেন্দ্রে তাপমাত্রা মাপা হয়। এরপর ট্রাকচালকরা পণ্যবাহী গাড়ি নিয়ে স্থলবন্দরের পার্কিং ইয়ার্ডে ঢোকেন।
বন্দরে করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল কর্মকর্তা স্বপ্না রানী মণ্ডলের দাবি, অটো স্ক্যানারের মাধ্যমে ভারতীয় প্রত্যেক ট্রাকচালকের তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়। নির্ধারিত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হলে তাদের ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। অন্যদের টোকেন দিয়ে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়।
স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই খাবার দোকানগুলোতে ভিড় করছেন ভারতীয় ট্রাকচালকরা
পরীক্ষা কেন্দ্রের আরেক কর্মকর্তা সদর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আবুল কাশেম অবশ্য জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোনো চালক বা তার সহকারীর নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা পাওয়া যায়নি।
স্থলবন্দরের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করা এসব ট্রাকচালকের অধিকাংশই টিকা নেননি, এমনকি নমুনা পরীক্ষাও করেননি বলে জানিয়েছেন।
কলকাতার ট্রাকচালক জগদীশ বিধর, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ইটিন্ডা কলবাড়ি এলাকার রবিউল সরদার, নদীয়া জেলার দেব গ্রামের ফিরোজ শেখ, পশ্চিমবঙ্গের ঘোড়ারাষ এলাকার আব্দুল হামিদ এবং পশ্চিমবঙ্গের রামপুরহাট এলাকার এমডি মোল্লার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তারা জানান, তারা কেউ এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেননি। কেউ কখনও নমুনা পরীক্ষাও করাননি।
সামাজিক দূরত্ব না মেনে অবাধ চলাচলের বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন জানান, ভোমরা স্থলবন্দরে পুলিশের যে দল কাজ করছে, তা আরও সক্রিয় করা হবে।
সদর উপজেলার ইউএনও ফাতেমা-তুজ-জোহরা জানান, শ্রমঘন এলাকায় লকডাউন মানানো খুবই কঠিন। তবু সেখানে মোবাইল টিমকে আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হবে।