লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের চরবালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেঘনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়ায় বিদ্যালয়ের চেয়ার-টেবিল অন্যত্র সরিয়ে রাখা গেলেও ভাঙন থেকে রক্ষা করা যায়নি দ্বিতল বিদ্যালয় ভবনটি।
তবে গত বছর থেকে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে বিদ্যালয়টি রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
সারা বছর রামগতির মেঘনায় ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর থেকে নদী আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ রূপ নেয় ভাঙন।
এদিকে, বর্ষা শুরু হওয়ায় ভাঙন আরও বেড়ে যায়। গত কয়েক দিনের ভাঙনে মেঘনা ধেয়ে আসে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের দিকে। মঙ্গলবারের তীব্র ভাঙনে সদ্য নির্মিত বিদ্যালয় ভবনটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
চোখের সামনে প্রিয় স্কুল এভাবে বিলীন হয়ে যেতে দেখে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। একইভাবে গত বছর পাশের কমলনগর উপজেলার চরফলকন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনসহ তিনটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। এভাবেই তিন যুগ ধরে ভাঙনে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে।
চরবালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে সাময়িকভাবে স্থানীয় একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। কোনোভাবেই যাতে ছাত্রছাত্রী ঝরে না পড়ে, এ ব্যাপারে শিক্ষকরা ভূমিকা রাখবেন বলে জানানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম বলেন, ‘হঠাৎ ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভাঙন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চলে আসে। এমন পরিস্থিতিতে চেয়ার-টেবিল, আলমারিসহ মালপত্র স্থানীয় বালুর চর উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে রক্ষা করা হয়েছে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আহসান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের কার্যক্রম আপাতত পার্শ্ববর্তী একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্রুত বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘গত বছরের বর্ষায় বিদ্যালয়টি ভাঙনের মুখে পড়ে; এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় রক্ষায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। এবারের বর্ষায় ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যালয়টি আর রক্ষা করা যায়নি।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, ‘রামগতি ও কমলনগরকে মেঘনা নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় গত ১ জুন একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ৩ হাজার ৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন।’
এ ছাড়া জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদিত প্রকল্পের কাজ শুরু করা ও কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সংসদে বিষয়টি বলেছেন বলেও জানান তিনি।