এবারের শাটডাউনে চট্টগ্রামে ফরহাদ কবির নামের এক চিকিৎসককে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
রাজধানীতে এপ্রিলের কঠোর লকডাউনে ডা. জেনিকে পুলিশের হেনস্তার ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় হয়েছিল। এবার চট্টগ্রামে হেনস্তার শিকার হলেন আরেক চিকিৎসক।
শনিবার রাতে নিউজবাংলাকে ঘটনার বিস্তারিত জানান সাতকানিয়ার আলফা হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনোসিস সেন্টারের চিকিৎসক ফরহাদ কবির।
শুক্রাবার সন্ধ্যায় সাতকানিয়া উপজেলা সদরের কলেজ রোডের সামনে এই ঘটনা ঘটেতস
ফরহাদ কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি সাধারণত শুক্রবারে চেম্বার করিনা। তবে ওইদিন চেম্বারে এক ইমার্জেন্স রোগী এসেছে জানতে পেরে তড়িঘড়ি করে রোগী দেখার উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল নিয়ে রাওনা হই। কলেজ রোডের মুখে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে থামালে আমি পেশাগত পরিচয় দিই। তা সত্ত্বেও তারা আমার মোটরসাইকেলের চাবিটি নিয়ে আমাকে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
‘এ সময় ইউএনওকে আমার পেশাগত পরিচিয় দিলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে কয়েকটি কুরুচীপূর্ণ শব্দ বলেন এবং বেশি কথা বললে জেলে নেয়ার হুমকী দেন।’
ডা. ফরহাদ বলেন, ‘জেলে নেয়ার কথা বলায় ঝামেলা না বাড়িয়ে আমার কোনো দোষ থাকলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করি। এতে তিনি আমাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান। আমার কাছে দুই হাজার টাকা নেই জানালে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
‘এ সময় তার সহযোগীদের মামলার কাগজে খুব বাজেভাবে আমার নামের আগে ডা. শব্দটি বড় করে লিখতে বলেন তিনি, যেন ডাক্তারকেও ফাইন করা হয়েছে সেটা সবাইকে দেখানো যায়।’
তিনি আরও জানান, ইউএনও বলেছেন, ‘আপনারা লকডাউন দেয়ার জন্য সুপারিশ করেন। আমরা লকডাউন সফল করতে পারি না বলে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এখন আপনারা লকডাউন মানছেন না।’
ডা. ফরহাদ বলেন ‘চিকিৎসক অন্যায় করে জরিমানা খেয়েছে বলে তা পত্রিকায় দেয়ার জন্য আমার ছবি তুলে রাখেন এবং আমার রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেন তিনি।’
এ বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওই সময় আমার সঙ্গে থাকা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী একসাথে সাত-আটটি মোটরসাইকেল আটক করেন। তিনি যে চিকিৎসক আমরা সেটি নিশ্চিত হতে পারিনি। কারণ আমরা তার কাছে আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র চাইলে তিনি কিছুই দেখাতে পারেননি। এমনকি তার মাস্ক ও হেলমেট পর্যন্ত ছিল না। তিনি নিজেই অন্যায় স্বীকার করে জরিমানা করতে বলেছেন।’
ওই চিকিৎসককে জেলে নেয়ার হুমকী এবং কুরুচীপূর্ণ শব্দ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘আমরা তো ইচ্ছে করে রাস্তায় নেমে সারাদিন খাটছি না। আমরা সরকারি নির্দেশ পালন করতে রাস্তায় নামছি। এ সময় কেউ ওই চিকিৎসককে জেলে নেয়ার হুমকী দেননি। কোনো কুরুচীপূর্ণ শব্দও কেউ ব্যবহার করেনি। আর তিনি যদি মনে করেন তার সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে তিনি তো ডিসি স্যারের কাছে রিভিউ করতে পারেন, আমরা তো কেউ ই আইনের উর্ধ্বে না।’
মাস্ক, হেলমেট, আইডি কার্ড এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার বিষয়ে ডা. ফরহাদ কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি ইমার্জেন্সি একটা রোগী দেখতে যাচ্ছিলাম। এসময় আমি তাড়াহুড়ার মধ্যে ছিলাম। তাই কিছু নেয়ার মত পরিস্থিতি ছিল না। তবে মাস্কের বিষয়টা অসত্য। তারা আমার ছবি তুলেছে, ছবিগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন আমার মাস্ক ছিল কিনা। এমনকি ছবি তোলার সময় মাস্ক নিচে নামাতে বাধ্য করেছিলেন তারা।’
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
গত ১৮ এপ্রিল কঠোর লকডাউনের পঞ্চম দিনে রাজধানীর অ্যালিফ্যান্ট রোডে ডা. সাঈদা শওকত জেনির গাড়ি আটকে তার পরিচয়পত্র দেখতে চান নিউমার্কেট থানার ওসি। ওই গাড়িতে চিকিৎসকের কর্মস্থল বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের স্টিকার লাগানো ছিল। তার গায়েও ছিল অ্যাপ্রোন। তবুও ওসি চাপ দিতে থাকলে তর্কাতর্কি হয়। ডা. জেনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ওই ঘটনার আংশিক ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এ নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় হয়।