মায়ের কোলে ছোট্ট শিশু। নরম হাতে শক্ত করে জড়িয়ে আছে মাকে। তার পিঠজুড়ে নির্যাতনের ছাপ। ঘাড় থেকে কোমর পর্যন্ত লালচে হয়ে আছে। আছে জখমের ক্ষতও। ওই মা-শিশুকে ঘিরে আছে কিছু উৎসুক মুখ।
ফেসবুকে শনিবার ভাইরাল হয়েছে এমন একটি ছবি। যারা ছবিটি দেখেছেন তারাই শিউরে উঠেছেন। অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে, ইশ, কী অপরাধ ছিল শিশুটির।
ছবিটি হবিগঞ্জের মাধবপুরের। মোড়াপাড়া এলাকার এক গৃহবধূ তার স্বামীর বিরুদ্ধে সন্তানকে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত সৎবাবার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে, সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে তারা বিষয়টি জেনেছে। থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।
যন্ত্রণায় কাতর তিন বছরের শিশু তোফায়েল হোসেনকে হাসপাতালে ভর্তি করা যায়নি। তাকে গ্রাম্য ডাক্তারের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় রাখা হয়েছে।
শিশুটির সৎবাবা মোহন মিয়া হবিগঞ্জের পুরাসুন্দা গ্রামের বাসিন্দা। পরিবার নিয়ে তিনি মোড়াপাড়া এলাকায় বসবাস করেন।
শিশুটির মা রেখা বেগম নিউজবাংলাকে জানান, হবিগঞ্জের নূরপুর ইউনিয়নের সুতাং এলাকার আহাদ মিয়ার সঙ্গে কয়েক বছর আগে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে জন্ম হয় এক মেয়ে ও ছেলের।
সাড়ে তিন বছর আগে আহাদ মারা যান। এরপর মোহনকে বিয়ে করেন তিনি। স্বামীর পাশাপাশি নিজেও স্থানীয় একটি কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করেন।
শুক্রবার তিনি কাজ থেকে বাড়ি ফিরে দেখেন মোহন শিশু তোফায়েলকে মারধর করেছেন। পরে ছেলেকে হাসপাতালে নিতে চাইলেও লকডাউনে গাড়ি না চলায় তা সম্ভব হয়নি। গ্রামের বাজারের ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়েছেন।
শিশুটির বোন জিহানা বেগম বলেন, ‘আব্বা তোফায়েলকে ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করেন। কিন্তু এরপরও সে বৃষ্টির পানিতে ভিজেছে শুনে মারধর করেছেন।’
তাদের প্রতিবেশী ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘শিশুটিকে মারধরের সময় তার মুখ চেপে ধরে রাখেন মোহন মিয়া। এ ছাড়া তার বড় বোনকে বেঁধে রাখেন। হঠাৎ শিশুটির চিৎকার শুনে এগিয়ে গেলে মোহন পালিয়ে যান।’
এ ব্যাপারে মোহন মিয়ার ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আপনাদের কাছ থেকে আমরা বিষয়টা জেনেছি। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি।’