বরগুনার পাথরঘাটায় স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে হত্যা করে শাহীন মুন্সি নামের এক যুবক ছয় হাত মাটি খুঁড়ে মাটি চাপা দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ । তাকে ধরিয়ে দিতে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে বরগুনার পুলিশ প্রশাসন।
শনিবার সকাল ১০টার দিকে পাথরঘাটার পূর্ব হাতেমপুর এলাকায় খালপাড়ের মাটি খুঁড়ে পুলিশ গৃহবধূ সুমাইয়া ও তার ৯ মাসের কন্যার মরদেহ উদ্ধার করেছে।
পারিবারিক বিরোধের জেরে বুধবার শাহীন মুন্সি স্ত্রী-কন্যাকে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করছে পুলিশ।
২৩ বছর বয়সী শাহীন পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পূর্ব হাতেমপুর গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে। তিনি পেশায় জেলে। সুমাইয়া একই এলাকার রিপন বাদশাহর মেয়ে।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সুমাইয়ার বাবা রিপন বাদশাহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও তিন-চারজনকে আসামি করে পাথরঘাটা থানায় মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন সুমাইয়ার স্বামী শাহীন, শাশুড়ি শাহিনুর, মামাতো ভাই ইমাম ও ইমামের শ্যালক রিমন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার জানান, প্রাথমিক তদন্তে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। দুজনের মরদেহের সুরতহাল সম্পন্ন হয়েছে। সুমাইয়ার ডান হাতের কনুই ও ডান চোখে রক্ত জমাট পাওয়া গেছে। হত্যাকারী সুমাইয়াকে আঘাতের পর গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। শিশুটিকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে।
এএসআই আবুল হোসেন সুরতহাল সম্পন্ন করেছেন বলে জানান ওসি বাশার।
বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ সরকার জানান, শাহীন তার স্ত্রী ও সন্তানকে মেরে লাশ গুম করার জন্য প্রায় ছয় হাত মাটি খুঁড়ে চাপা দেন। সকাল ১০টার দিকে পুলিশ মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করে। সুরতহাল শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘শাহীন মুন্সিকে ধরিয়ে দিলে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। যেহেতু সারা দেশে লকডাউন চলছে, সে ক্ষেত্রে এলাকা থেকে বের হয়ে যাওয়া তার জন্য কষ্টসাধ্য।’
এলাকা থেকে বের হওয়ার আগেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হবে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল।
সুমাইয়ার বাবা রিপন জানান, বিয়ের পর থেকে তাদের সংসারে ঝামেলা লেগেই থাকত। বিশেষ করে শাশুড়ি শাহিনুর বেগম, দাদি শাশুড়ি জবেদা বেগমসহ অনেকেই সুমাইয়াকে মেনে নিতে পারছিলেন না। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠকেও ফল হয়নি।
তিনি আরও জানান, বুধবার দুপুরে সুমাইয়ার বাবার বাড়িতে তাদের দাওয়াত ছিল। শাহীন সেখানে যাননি। দুপুরে দাওয়াত খেয়ে সুমাইয়া তার স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে শিশুসহ নিখোঁজ হন। ঘটনাটি বৃহস্পতিবার পুলিশকে জানানোর পর থেকে শাহীন গা ঢাকা দেন। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ করে রাখেন।
শাহীন মাদকাসক্ত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
শিশুসহ সুমাইয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর শাহীনের মা শাহিনুর, দাদি জবেদা ও মামাতো ভাই ইমামকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তাদের মধ্যে মামলার আসামি শাহিনুর ও ইমামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।