ঢাকার সাভারে একটি তৈরি পোশাক কারখানার ভেতরে বেশ কয়েকজন শ্রমিক হঠাৎ সংজ্ঞা হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তাদের সহকর্মীরা।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে আশুলিয়ার দক্ষিণ বাইপাইল এলাকার ডংলিয়ান ফ্যাশন (বিডি) লিমিটেড কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
অসুস্থ শ্রমিকদের পাশের হাবিব জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, ‘সকালে প্রথম একজন শ্রমিক অসুস্থ হন। তাকে হাসপাতালে রেখে আসতেই অন্তত আরও ১৪ জন বমি এবং মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে কারখানার ভেতরে ফ্লোরে পড়ে যান।
‘তাদেরও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজকা আবার এই সংখ্যাটা বেশি। প্রতিদিন তো একজন না একজন অসুস্থ হইতাছে। গত ১৫ দিন ধইরেই এই সমস্যাটা শুরু হইছে।’
একের পর এক সহকর্মী সংজ্ঞা হারিয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলেও তারা অসুস্থতার কারণ জানাতে পারছেন না।
ডংলিয়ন কারখানার শ্রমিক সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানে অফিসে এটটু সমস্যা হইছে। হুট কইরা মানুষ অসুস্থ হইয়া পড়ে অফিসের মইদ্দে। সকালের দিকে অফিসে একজন অসুস্থ হইল। তারে আমরা মেডিক্যালে রাখতে যায়্যা আবার সাড়ে ১০টার দিকে অফিসে আইছি।’
তিনি বলেন, ‘গেটের মইদ্দে ঢোকামাত্র দেখি ফ্লোরের মইদ্দে সবাই খালি পড়ি যাইতেছে। মাথাব্যথা আর বমি হইতেছিল তাদের। এ পর্যন্ত তাও ৪০-৪৫ জন অসুস্থ হইছে। আজকেও ১০-১১ জন হইছে।’
একই কারখানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শ্রমিক বলেন, ‘অন্তত ১২-১৪ জন শ্রমিক অসুস্থ হইয়া যখন পইড়া গেছে, তখন স্যারেরা ভিডিও করে আর কয় নাটক করে। ওনারা মেডিক্যালে নিব না। আমরা জোর কইরা মেডিক্যালে আনছি।’
এ বিষয়ে হাবিব জেনারেল হাসপাতালের ম্যানেজার বিল্লু দাস বলেন, ‘একটি কারখানার বেশ কয়েকজন শ্রমিককে অসুস্থ অবস্থায় আনা হয়েছে। ডাক্তাররা তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। আসলে কী হয়েছে, ডাক্তার পর্যবেক্ষণের পর জানাতে পারবেন।’
এ বিষয়ে ডংলিয়ন ফ্যাশন (বিডি) লিমিটেড কারখানার কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি কারখানায় গেলে সাংবাদিকদেরও ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আমজাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে তিনটা বিষয় থাকতে পারে। সকালবেলা হয়তো তারা খেয়ে আসেননি। যে কারণে গ্লুকোজ লেবেল কমে গেলে অনেক সময় মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সবার ব্লাড সুগারটা চেক করতে পারলে ভালো হবে।’
তিনি বলেন, ‘যদি সুগার ঠিক থাকে, তাহলে অজ্ঞান হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। দুই নম্বর হলো, ওনারা যে এনভায়রনমেন্টে কাজ করেন, ওইটা কেমন? সেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের পাশাপাশি দেখা দরকার সাউন্ড সিস্টেমটা কেমন? অনেক সাউন্ড হয় কি না? এটাও কারণ হতে পারে।
‘আরেকটা কারণ হতে পারে, এত মানুষের মধ্যে কাজ করেতেছে অথচ সবকিছু বন্ধ। সেদিক থেকে সাইকোলজিক্যাল সমস্যাও হতে পারে। যেহেতু ১০-১২ জনের এমন হয়েছে, সেহেতু সেখানে একটি স্বাস্থ্য টিম যাওয়া দরকার। গেলে কারণটা সঠিক ভাবে বলতে পারবে।’
শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই কারখানায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার খবর জেনেছি। আমরা তদন্ত করে দেখছি।’